শিরোনাম
দক্ষিণ চট্টগ্রাম, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া, বান্দরবান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে পাহাড়ি পথে বোয়ালখালীতে আসে দৈনিক হাজার হাজার গ্যালন চোলাই মদ। প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ায় বোয়ালখালী উপজেলাকে নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক বিক্রেতারা। দেশীয় তৈরি চোলাই মদের অন্যতম ট্রানজিটে পরিণত হয়েছে এই উপজেলা। এইসব মদের পাশাপাশি ইয়াবা এবং গাঁজাও দেদারসে বিক্রি হচ্ছে উপজেলায়। উপজেলা শহরের কাছাকাছি হওয়ায় এখান থেকেই নগরে ছড়িয়ে পড়ছে এসব মাদক দ্রব্য।
উপজেলায় উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে মাদকাসক্তের সংখ্যা। মাদক সেবনের কারণে প্রায় সময় ঘটছে চুরি ছিনতাইসহ সামাজিক অপরাধ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।
তারা বলছেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর মাদক উদ্ধারে বোয়ালখালী উপজেলায় তেমন কোন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। যার কারণে দিন দিন বাড়ছে মাদক কারবারি ও মাদক সেবীদের দৌরাত্ম। রাঙামাটি, বান্দরবান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রতিনিয়তই আসছে মাদক দ্রব্য। শহরের কাছে হওয়ায় এই রুট ব্যবহার করে অলিগলিতে পৌঁছে যাচ্ছে মাদক দ্রব্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, আমরা মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছি। কিন্তু নিয়ন্ত্রণে আসছে না মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম। এইসব অভিযানে মাদক সেবী, মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার ও মাদক উদ্ধারও রয়েছে।
জানা গেছে, রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া, বান্দরবান ও রাঙ্গুনিয়া থেকে পাহাড়ি পথে বোয়ালখালীতে আসে দৈনিক হাজার হাজার গ্যালন চোলাই মদ।
মাদক ডিলারাই এসব মদ কিনে আনেন। দূর্গম পাহাড়ি পথ বেয়ে বস্তায় করে কাঁধে বয়ে শ্রমিকরা এসব মদ নিয়ে আসেন। এরপর ভোর বা সন্ধ্যায় বোয়ালখালী উপজেলার জৈষ্ঠ্যপুরা গুচ্ছগ্রাম সড়ক, আমুচিয়ার সূর্যব্রত বিল ও করলডেঙ্গার দিয়ে লোকালয়ে পৌঁছে। খুচরা বিক্রেতারা সড়ক ও নদী পথে এসব মদ দক্ষিণ এবং উত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় নিয়ে যায়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এসব মাদক পাচারে ট্রানজিট হিসেবে বোয়ালখালীকে ব্যবহার করেন মাদক ডিলাররা। এজন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেন মাসোহারা দিয়ে। খুচরা বিক্রেতারাও মাসোহারা দিয়ে সন্ধ্যার পর মদ বিক্রি করছেন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে।
চোলাই মদের পাশাপাশি বোয়ালখালীতে গত এক দশক ধরে ইয়াবার বিস্তার ঘটেছে। মাদক বিরোধী অভিযানে প্রায় সময় চোলাই মদের চালান ধরা পড়লেও ইয়াবা উদ্ধারের উল্লেখযোগ্য তথ্য তেমন নেই। কক্সবাজার জেলা থেকে পটিয়া হয়ে একাধিক সড়ক পথে এসব ইয়াবার চালান বোয়ালখালীতে ঢুকে। তবে গুটি কয়েক অভিযানে ইয়াবা সেবী এবং হাতে গোনা ইয়াবা উদ্ধারের তথ্য রয়েছে পুলিশের খাতায়। একই ভাবে আরেক মাদক গাঁজারও।
একাধিক সূত্র বলেছে, উপজেলার করলডেঙ্গা ইউনিয়নের তালুকদার পাড়ার সাদেক, ম্যারা সাইফুল, সুমন, পটিয়ার রতনপুরের এস আলম, সারোয়াতলী লালার হাটের সাইফু, খিতাপচরের আবচার, ইমাম নগরের রুবেল, মাসুদ, সহিদ, শিবু, আকতার, জৈষ্ঠ্যপুরার ফারুক, সুব্রত ও প্রদীপসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় ডিলার। এদের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা। গ্রেপ্তারও হয়েছেন বেশ কয়েকবার।
জানা গেছে, উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা, খিতাপচর, খরণদ্বীপ, চরণদ্বীপ, কধুরখীল, পূর্ব গোমদণ্ডী ও পশ্চিম গোমদণ্ডীতে সন্ধ্যা পর থেকে বিক্রি হয় মাদক। এসব স্পটের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থানার সোর্সরা মাসোহারা আদায় করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত দুই মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের ১৩ নভেম্বর আমুচিয়া ইউনিয়েনর কানুনগোপাড়া থেকে ৩০০ লিটার চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার হন নুর বক্স। ১৭ নভেম্বরে একই ইউনিয়ন থেকে ১৫০ লিটার চোলাই মদসহ গ্রেপ্তার করা হয় মিঠুন সর্দারকে। ১৮ নভেম্বর কধুরখীল জমাদার ঘাটা এলাকা থেকে ৩০০ লিটার মদসহ গ্রেপ্তার হন নাজিম উদ্দিন নেজাম। ২৩ নভেম্বর ৫ লিটার মদসহ মো. মহিউদ্দীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর করলডেঙ্গা থেকে ৫০০ লিটার মদসহ গ্রেপ্তার করা হয় নাছির উদ্দীন সুজনকে। ২১ ডিসেম্বর সারোয়াতলী উত্তর কঞ্জুরী গ্রাম থেকে ৭০০ লিটার মদসহ গ্রেপ্তার হন রিমন দাস।