শিরোনাম
ফেনী, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরিষা আবাদের মধ্য দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্তসময় কাটাচ্ছেন। সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলার প্রতিটি গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাঠে মাঠে দেখা মিলছে আগাম সরিষা ফুলের হাসি। সরিষার পাশাপাশি মুগ, মটর, বেগুন, মুলা, টমেটো, ফুলকপি, পাতাকপি সহ লাউ, কুমড়া, পালং, লাল শাক, ধনিয়া পাতা মিলিয়ে বাহারি শাক-সবজি আবাদও হয়েছে বেশ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্র্তাদের আশা, বিপর্যয় কাটিয়ে শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াবে েেজলার কৃষকেরা। নিত্যনতুন ফসল চাষের পাশাপাশি জেলায় এবার গত মৌসুমের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদে জেলায় বাম্পার ফলন হওয়ায় সম্ভাবনা আছে। এতে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে। আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে কৃষিখাতে ৪৪৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা সরিষা চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবেন। আমন ধান কাটার পর তেলজাতীয় বীজ ও ডালজাতীয় বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার কৃষককে। প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকার বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষে ৫ হাজার কৃষককে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে ৬ হাজার ৬৪ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষায় লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর, ২০২২ সালে ১ হাজার ৮০৬ হেক্টর, ২০২১ সালে ১ হাজার ৯০৭ হেক্টর ও ২০২০ সালে ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছিল। সেই হিসেবে সরিষা চাষের পরিমাণ দিন দিন বেড়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর সরিষা চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে সোনাগাজীতে। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৬৪৮ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। সদর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ হাজার ৯৫০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭০ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯৩০ হেক্টর। ছাগলনাইয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২০ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৬৫০ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ৫৮০ হেক্টর। ফুলগাজীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৬৮২ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ৬৩৫ হেক্টর। পরশুরামে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২০৫ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ২২৬ হেক্টর। দাগনভূঞায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২০০ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ২২৫ হেক্টর।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সমস্যা না হলে চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদে পরশুরামে বাম্পার ফলন হওয়ায় সম্ভাবনা আছে। আগস্টের বন্যায় পরশুরামে কৃষিখাতে ৪২০৯ হেক্টর জমি ক্ষতি হয়েছে। টাকার অংকে এর পরিমাণ ৬৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। যা বন্যার পর কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতার এবং কৃষকদের কঠিন পরিশ্রমে ৮০শতাংশ ফসল উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ হয়েছে বক্সমাহমুদ ইউনিয়নে। তাই এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২২৬ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে আবাদ হয়েছে ২৩০ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ২৪২ হেক্টর জমিতে। অর্জন হয়েছে ২২৬ হেক্টর।
পরশুরাম উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিন্টু কুমার দাস জানান, পরশুরাম উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরিষা চাষের কাজ চলছে। অন্য ফসলের তুলনায় সরিষায় লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। সেই হিসেবে সরিষা চাষের পরিমাণ দিনদিন বেড়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর সরিষা চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রণোদনা ছাড়া কৃষক নিজে সার, বীজ ক্রয় করে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
পরশুরাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা সরিষা চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে পারবেন। আমন ধান কাটার পর তেল জাতীয় বীজ ও ডালজাতীয় বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে প্রান্তিক কৃষককে। প্রায় কোটি টাকার বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষে উপজেলায় ৭০০ জন কৃষককে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ২৩৪ জন কৃষকের মাঝে সরিষা বীজ দেয়া হয়েছে।