শিরোনাম
ঢাকা, ৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ‘বিভেদ নয়-ঐক্যে’র আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা যেন বিভক্তির রাজনীতি না করি। এখন প্রয়োজন দেশকে বাঁচানো। গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার জন্য এই মুহূর্তে ঐক্য জরুরি।’
তিনি বলেন, 'দেশের সমস্ত গণতন্ত্র প্রেমী মানুষ ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানাব, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। বিভাজন সৃষ্টি করবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মিথ্যা মামলার শুনানিকালে আদালতে দেওয়া তাঁর জবানবন্দির ওপর রচিত ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
‘দ্যা প্যাট্রিয়ট’ প্রকাশনা সংস্থার ৩০০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মূল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।
আদালতে খালেদা জিয়া যেসব জবানবন্দি দিয়েছেন- তা গ্রন্থে রূপ দিতে নেপথ্যে বিএনপির আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান এবং সাংবাদিক শফিক রেহমান ও খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব সাংবাদিক মারুফ কামাল খানের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও অনুষ্ঠানে স্মরণ করেন বিএনপি মহাসচিব।
সংস্কার প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারব না।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যে সকল সংস্কার এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি- এর পেছনে যে শক্তিটা লাগবে সেটা হচ্ছে একটি নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে কখনো লেজিটেমেসি দিতে পাবর না আমরা। এটা ফ্যাসিস্টরা পারবে।’
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব খুব শিগগিরই মুক্ত হবেন। কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি সব মামলা থেকে মুক্ত হয়ে তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন ইনশাল্লাহ।’
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে হটাতে বিএনপি ও ছাত্র জনতার অবদান তুলে ধরে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের জনগণের, যুবকদের, স্বেচ্ছাসেবকদের, ছাত্রদের, মহিলাদের যে ত্যাগ কোনো মতেই বৃথা যাবে না। বৃথা যায়নি। আমরা ফ্যাসিবাদকে এ দেশে থেকে তাড়াতে পেরেছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে আমরা কেন জানি নিজেদের মধ্যে পুরো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না। ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। কারণ, চারপাশে একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকবার জন্য। অথচ কেউই বুঝতে চায় না যে ক্ষমতায় টিকে থাকা তখনই সম্ভব যখন ক্ষমতার পুরো প্রক্রিয়া সমাধান করা যাবে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশে প্রথম সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘সংস্কার তো আমরাই শুরু করেছি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব প্রথম দেশের মূল সংস্কার করেছেন। তিনিই এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এনেছিলেন। দেশে একটা বদ্ধ অর্থনীতি ছিলো, সেখানে তথাকথিত ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে, সেখানে তিনি একটা মিশ্র বা মুক্ত অর্থনীতির মতবাদ নিয়ে এসেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন, সেই দর্শন ইটসেলফ সংস্কারের মূলকথা। একইসঙ্গে ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল সংস্কারের বড় কর্মসূচি। আমাদের এগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা বেগম জিয়ার লন্ডনে যেতে রাজকীয় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য কাতারের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্যে লন্ডনে গেলেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিয়ে তাকে ‘সিঅফ’ করেছে।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ জানাই বৃটিশ সরকারকে তারা সেখানে আমাদের দলীয় চেয়ারপার্সনের লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন। তাদের সহায়তায় সেখানে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবসহ যারা আছেন, তারা ম্যাডামের চিকিৎসার ব্যবস্থা দ্রুত শুরু করতে পেরেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সাবেক সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মাহমুদা হাবিবা, বিগত সরকারেরে আমলে নানাভাবে নির্যাতিত অললাইট অ্যাক্টিভিস্ট হুমায়ুন কবীর, রেজাউর রহমান, ফসিউল আলম, কাজল রহমান, শিপন মোল্লা, ওয়াসিম ইফতেখারুল হক, আবদুর রহমান নূর রাজন, রেজওয়ানুল হক শোভন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।