শিরোনাম
ঢাকা, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী প্রকল্পসমূহের চুক্তি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা।
বক্তারা বলেন, ভারত বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে একচেটিয়া আধিপত্য সৃষ্টি করেছে। আদানি, রামপাল, রূপপুরসহ বিভিন্ন প্রকল্পের চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের কাছে বিভিন্নভাবে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এবং একের পর এক চুক্তি করেছেন।
‘বাংলাদেশে ভারত রাষ্ট্রের আধিপত্য : স্বরূপ ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সেমিনারে বক্তব্যে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সেমিনারে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বিগত সরকারের এই সমস্ত দেশ বিরোধী চুক্তিগুলোর কারণ উল্লেখ করে বলেন, এর কারণ ছিল একটাই, নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার ক্ষমতা কিভাবে দীর্ঘদিন পাকাপোক্ত করা যায়। পরবর্তীতে এ কারণেই তাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে।
আনু মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে যত ধরনের সামরিক-বেসামরিক চুক্তি আছে সেগুলো জনগণের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
সেই চুক্তির মধ্যে যেগুলো জনস্বার্থ বিরোধী, বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো যেমন- রামপাল, রূপপুর প্রকল্প বাতিলের দাবিও জানান তিনি।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, রূপপুর প্রকল্প বাংলাদেশের কোন গৌরব নয় বরং এটা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় আর্থিক বোঝা, প্রাণের জন্য হুমকি এবং দেশের জন্য হুমকি।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে হিন্দু মুসলমান সমস্যা না। এটা একটা আধিপত্য বিস্তারের সমস্যা। এটা থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারকে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে নজর দিতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ ভারতের সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত রাষ্ট্র কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল।
বাংলাদেশের আধিপত্য বিস্তারের বিরোধীতা করার কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করে তিনি বলেন, যখন চুক্তিগুলো হলো, তখনো সীমান্তে একের পর এক হত্যাকান্ড চলছে।
রূপপুর প্রকল্প ভারতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেই রয়েছে উল্লেখ করে আনু মোহাম্মদ বলেন, বর্তমান সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল এই চুক্তিগুলো বাতিলের কি কি পথ আছে সেগুলো খোঁজখবর নেয়া।
তিনি বলেন, বাতিল করলে কিছু ক্ষতি হলেও চালু থাকলে ক্ষতি হবে আরও বেশি। ৫৩ বছরের হিসেব বলে পানি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করে কোন লাভ নেই।
এটা নিয়ে জাতিসংঘের পানি কনভেনশন হয়েছে। সেখানে ভারত স্বাক্ষর করেনি এবং বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেনি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশের দায়িত্ব হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই কনভেনশনে সঙ্গে যুক্ত হওয়া। সীমান্ত সমস্যা ও ট্রানজিট বিষয় আমরা আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারি।
তিনি বলেন, ট্রানজিট চুক্তিটি বাতিল করে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উচিত। এছাড়া এ ক্ষেত্রে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো বাড়ানো দরকার।
পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে কিছু করবো, আমরা তো অত শক্তি ধারণ করি না।
তিনি বলেন, যে কাজগুলো সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার কথা ছিল সেগুলো দেখছি না।
ভারতের মিডিয়াগুলোতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অপপ্রচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা একটা সহজ কাজ ছিল যে ভারতের মিডিয়ায় প্রচারিত ফেইক নিউজগুলোর সঠিক তথ্যটি প্রকাশ করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষক তানজিম উদ্দিন খান বলেন, অনাচারের ছিটমহল হলো বাংলাদেশ। বিশেষ করে স্বৈরাচারী মহলের, যাকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নদী তিস্তা বারেজের কারণে স্থানীয় লোকজন ১৫০ টার মতো মামলা করেছে। তিস্তা চুক্তি শিগগিরই করার দাবি জানাচ্ছি।
তানজিম আধিপত্যের রাজনীতি থেকে উঠে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক মোর্শেদা সুলতানা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করতে হবে। রূপপুর প্রকল্পে ভারত লাভবান হবে।
আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর অধ্যাপক মাহা মির্জাও বক্তব্য রাখেন।