শিরোনাম
॥ শুভব্রত দত্ত ॥
বরিশাল, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার উদ্যোক্তা রেজাউল করিম নিজেই নিজের ভাগ্য গড়েছেন। নিজ মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা ও স্বাবলম্বী হয়ে তিনি। এ রেজাউল করিম হতে পারে ২০২৪-এর তরুণ সমাজের উজ্জীবিত করার এক জলন্ত দৃষ্টান্ত।
সরোজমিনে রেজাউল’র প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে, বরিশাল নগরীর জিয়া সড়ক লোহার পুল সংলগ্ন এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম বাদল। তিনি বুঝতে পেরেছিল নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হলে পরিশ্রমী হতে হবে।
একটা সময় ছোট বইয়ের লাইব্রেরি ব্যবসাা ছিল এ বাদলের। সংসারে অর্থনৈতিক সংকটও ছিল। বর্তমানে বাদল অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। ২০১৮ সালে সখের বসে ২টি দুম্বা ও ৪টি ছাগল পালন শুরু করে তিনি। আজ তার খামারে মরু অঞ্চলের প্রায় ৩০টি র্টাকি প্রজাতির দুম্বা এবং ব্লাক বেঙ্গল, তোতা পাড়ি, বৃটল, গুজরী ও দেশী প্রজাতিসহ ২ প্রজাতির প্রায় ৬’শ-এর বেশি ছাগল রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে নগরীর পলাশপুর বৌ-বাজার এলাকার প্রবাসী ফেরত ছাগল খামারী মো: রনি খান ও বরিশালের তালতলী সংলগ্ন ফার্ম হাউজ’র সত্বাধিকারী মো: আব্বাস বাসস’কে বলেন, এ খামারটির প্রতিটি ছাগল ও দুম্বা খুব রুষ্ট-পুষ্ট। কারণ খামারী বাদল ছাগল ও দুম্বাগুলোকে কোন প্রকার কৃত্রিম খাবার দেয় না। তাছাড়া খুব যত্ন নেয়। এর আগেও এখান থেকে ছাগল ক্রয় করেছেন। এটি তাদের দ্বিতীয় বার আসা।
এবিষয়ে রেজাউল করিম বাদল জানান, তার খালাতো ভাই শহিদুল ইসলামের উৎসাহে বিগত ৫ বছর আগে মেহেরপুর জেলা থেকে ২টি দুম্বা ও খুলনা জেলা থেকে ৪টি ছাগল এনে খামার করেন। এর কিছুদিন পর বাদল আরো প্রায় ২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। আজ তার খামারে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার দুম্বা ও ছাগল রয়েছে। বর্তমানে এ খামার থেকে ৩ মাস পর পর আয় হয় প্রায় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। তার খামারে শ্রমিক রয়েছে ১০ জন। প্রতি মাসে ব্যয় হয় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমার স্বপ্ন রয়েছে আগামী ১০ বছর পর প্রতিটি ঈদ ও কোরবানীতে বরিশাল নগরীর প্রায় ২০ ভাগ বাসিন্দার বাসায় দুম্বা পৌঁছে (অর্ডারের মাধ্যমে সাপ্লাই) দেবার। বর্তমানে তিনি বরিশাল জেলা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় এ দুম্বা ও ছাগল বিক্রি করে থাকেন।
রেজাউল করিম আরো জানান, টার্কি জাতীয় এসব দুম্বা ৬ মাস পর পর বাচ্চা দেয় এবং সেই বাচ্চাগুলো ৮-১০ মাসের মধ্যে ৮০-১২০ কেজি ওজনের হয়ে বিক্রির উপযোগী হয়। দুম্বা পালনে বাড়তি তেমন কোনো খরচ হয় না। দুম্বা পালনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। ভবিষ্যতে খামারটির আকার আরো বড় করে পূর্ণাঙ্গ একটি দুম্বার খামারের স্বপ্ন রয়েছে বাদলের। ছাগল ও দুম্বা পালনে ভিন্নতা না থাকায় আলাদা করে রাখার প্রয়োজন হয় না। আর খাবারও একই সঙ্গে খাওয়ানো হয়। সকাল-দুপুর আর বিকেল এ তিন বেলা ঘাসের পাশাপাশি গম ও ভুট্টার ভুষি খাওয়ানো হয়। দুম্বা ও ছাগল-এর খামারে ভ্যাকসিনসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করেছেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণি সম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. মো: লুৎফর রহমান বাসসকে বলেন, দুম্বা মূলত মরু অঞ্চলের প্রাণি। প্রাণিসম্পদ দপ্তর সার্বক্ষণিক দুম্বা ও ছাগলগুলোর চিকিৎসা সেবাসহ প্রায় সকল প্রকার খোজ খবর নিচ্ছে খামারটির। বরিশালে রেজাউল করিম-এর দুম্বা খামার ছাড়াও একাধিক খামারী অল্প স্বল্প দুম্বা পালন শুরু করেছেন।
ডা. মো: লুৎফর রহমান আরো বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি দুম্বায় তুলনামূলক রোগবালাই কম। বরিশালের পরিবেশ ও আবাহাওয়ায় দুম্বা পালনে কোনও সমস্য হচ্ছে না তাই এ খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। দুম্বা পালন একটি লাভজনক পেশা। দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল কাছাকাছি প্রাণি। পাশাপাশি দুম্বার খামার করতে বাংলাদেশের আবাহাওয়ায় তেমন কোন ঝুঁকি নেই। এ দুম্বা গৃহ পালিত পশু হিসেবেও পালন করা সম্ভব।