শিরোনাম
ঢাকা, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতা কেমি বেইদেনক দুর্নীতির অভিযোগ ও উদ্বেগের মধ্যে দেশটির সিটি মিনিস্টিার টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার শাসনের সঙ্গে টিউলিপ সিদ্দিককের সম্পর্কের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ কার প্রেক্ষাপটে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান কেমি বেইদেনক তার এক্স অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে বলেন, এখন কিয়ের স্টারমারের টিউলিপ সিদ্দিককে বরখাস্ত করার সময় এসেছে।
দ্য সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূসের মন্তব্যের পর এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনে ব্যবহৃত সম্পত্তি বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি সম্পত্তিগুলো অবৈধ উপায়ে অর্জিত হয়ে থাকলে তা বাংলাদেশে ফেরত দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
পোস্টে কেমি বেইদেনক অভিযোগ করেন, দুর্নীতির অভিযোগ থাকা স্বত্বেও স্টারমার তার ‘ব্যক্তিগত বন্ধু’ টিউলিপকে দুর্নীতি দমেনর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলের সঙ্গে তার যোগসূত্র নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সানডে টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের ব্যবহৃত সম্পত্তির বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি দুর্নীতি দমন মন্ত্রী হয়েছেন এবং আত্মপক্ষ সমর্থন করছেন। হয়তো তিনি তখন তা বুঝতে পারেননি, এখন বুঝতে পেরেছেন। তিনি বলুন, দুঃখিত, আমি তখন এটি জানতাম না। আমি এর জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি এবং পদত্যাগ করছি। কিন্তু তিনি তা বলছেন না, বরং নিজের পক্ষে সাফাই গাইছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সিটি মিনিস্টার হিসাবে আর্থিক দুর্নীতি মোকাবেলার দায়িত্বে রয়েছেন।
তার খালা ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের মালিকানাধীন সম্পত্তির সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সিদ্দিক স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে তার বিরুদ্ধে স্বাধীন তদন্তের অনুরোধ জানান।
তদন্তের অনুরোধ করে লেখা চিঠিতে সিদ্দিক নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে বলছি যে আমি কোন ভুল করিনি।’
প্রধানমন্ত্রী স্যার কেয়ার স্টারমার এক সংবাদ সম্মেলনে সিদ্দিকের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন যে তিনি নিজের বিরুদ্ধে তদন্তের কথা বলেছেন এবং ‘তার প্রতি আস্থা’ প্রকাশ করে ‘যথাযথ সঠিকভাবে কাজ করেছেন’।
তদন্তে সহায়তার জন্য সিদ্দিক এই সপ্তাহান্তে চীন সফরে চ্যান্সেলরের সঙ্গে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন।
বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ করে দাবি করা হয় যে তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মিত্রদের কাছ থেকে লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পেয়েছেন।
এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও টিউলিপের বিরুদ্ধে বিনামূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়ার অভিযোগে তুলেছেন।
সানডে টাইমসের খবরে বলা হয়, তিনি উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টিডে একটি ফ্ল্যাট ব্যবহার করতেন, যেটি শেখ হাসিনা প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মঈন গনি তার কিশোরী বোনকে দিয়েছিলেন।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস সংবাদ প্রকাশ করে যে তিনি কিংস ক্রসে একটি অ্যাপার্টমেন্টও ব্যবহার করেছিলেন যা তাকে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ দলের আরেক সহযোগী আব্দুল মোতালিফ দিয়েছিলেন।
এছাড়া সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে তিনি ২০১৩ সালে বাংলাদেশের রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় সহায়তা করেছিলেন। তবে তিনি তখন যুক্তরাজ্য সরকারের কোনো সরকারি পদে ছিলেন না।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার আত্মসাতের অভিযোগেও শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠেছে।
এসব অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে টিউলিপ সিদ্দিককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিপরিষদ কার্যালয়ের জাস্টিস অ্যান্ড এথিকস টিম।
গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে থেকে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নতুন সরকার কর্তৃক উত্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।