বাসস
  ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫৮
আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৬

পটুয়াখালীর লাখো মানুষের স্বপ্নের নাম বগা সেতু

পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর ওপর হবে বগা সেতু। ছবি : বাসস

পটুয়াখালী, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পটুয়াখালীর লোহালিয়া নদীর বগা পয়েন্টে একটি সেতুর অভাবে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার প্রায় ১৬ লাখ মানুষ দেশের সার্বিক উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফেরি ও ট্রলারে পারাপারে সময় নষ্টের পাশাপাশি নানামুখী ভোগান্তি পোহাচ্ছে বিভাগীয় শহর ও রাজধানীগামী লাখো যাত্রীরা। 

তিন উপজেলার মানুষের বহু বছরের লালিত স্বপ্ন বগা সেতু নির্মাণ হবে। দক্ষিণবঙ্গ থেকে এখন রাজধানীতে যেতে বগা ছাড়া অন্যকোথাও ফেরি পারাপার হতে হয় না।

এ অঞ্চলের ভুক্তভোগী জনগণ ও সংশ্লিষ্টরা জানায়, জেলা শহরের সাথে বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলাকে বিভক্ত করেছে লোহালিয়া নদী। প্রতিদিন এই নদীর বাউফল উপজেলার বগা পয়েন্টের ফেরি পারাপার হয়ে জেলা, বিভাগ ও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলাচল করে হাজার হাজার যানবাহন। প্রতিনিয়ত ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরি ঘাটে আটকে থেকে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।

অন্যদিকে ট্রলারে করে এই নদী পাড় হতে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। জেলার ভিতর সবচেয়ে বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা বাউফল। এই উপজেলাতে রয়েছে দেশের প্রাচীনতম বাণিজ্যিক এলাকা কালাইয়া ও কালিশুরি বন্দর। এই বাণিজ্যিক এলাকা থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে যায় শতশত গাড়ি ও মাঝারি আকৃতির ট্রাক। এছাড়াও বাউফল-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে বগা ফেরি হয়ে রাজধানীতে চলাচল করে দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার বহু যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন।

ফেরির এক যাত্রী জানান, ‘দশমিনা, গলাচিপা ও বাউফল- এই তিন উপজলার দৈনিক ১০-১২ হাজার যানবাহন এই ফেরি দিয়ে চলাচল করে। অনেক ভোগান্তি হয়। অনেক সময় রোগী নিয়ে এসে এই প্রান্তে বসে থাকতে হয় আর ফেরি থাকে ওই প্রান্তে। এই ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই। দেশে কত বড় বড় সেতু হয়। আর আমাদেরটা সে তুলনায় ছোট সেতু।এটি আমাদের স্বপ্নের সেতু।

একজন বাস চালক বলেন, বগা ব্রিজটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমরা অনেক সময় যখন লং জার্নি করে রাত্রে আসি তখন এই ব্রিজের অভাবে ফেরির অপেক্ষায় দুই থেকে তিন ঘন্টা বসে থাকি। অনেক সময় ইমার্জেন্সি রোগী আসে কিন্তু ফেরির জন্য দ্রুত পার হতে পারে না। এছাড়া বরিশাল বিভাগে আর ফেরি নাই। তাহলে কেন আমাদের বগায় ফেরি থাকবে। এরকম বিভিন্ন ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে আমাদের বগা সেতু প্রয়োজন। সরকার এটি করলে আমরা তিন উপজেলার মানুষ উপকৃত হবো।

অপর এক বাস যাত্রী বলেন, বগা নদীতে সেতুর অভাবে আমরা বাসে বসে সময় অপচয় করে অনেক ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। অনেক যাত্রীর কৃষি পন্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল পচে যাচ্ছে। এতে ভোগান্তি হচ্ছে আমাদের।

একজন নারী যাত্রী বলেন, ‘আমরা বাসে ফেরির অপক্ষোয় বসে আছি আর ফেরি ওই প্রান্তে আছে এতে আমাদের সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে আমাদের আসা-যাওয়া কষ্টের হচ্ছে। এখন যদি সরকার এখানে একটা সেতু দেয় তাহলে আমাদের অনেক সুবিধা হয়।

বগায় সেতুটি নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন যাবত দাবী জানিয়ে আসছে এ অঞ্চলের মানুষ। এটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে। এমনকি এখানকার কৃষিপণ্য ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাবে। 

শিবলি সাদেক নামের একজন বলেন, আমাদের যে ফসলাদি আছে এগুলো নিয়ে আমরা ঢাকার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারি না।  সব জায়গায়ই একটি প্রতিবন্ধকতা আছে। আমাদের তিন উপজেলার একটি দুঃখের নাম বগা ফেরি ঘাট। আমরা চাই সরকার দ্রুততার সাথে আমাদের বগা সেতুটি বাস্তবায়ন করুক।

বিগত সরকারের আমলে সেতুটি বাস্তবায়নের কথা হলেও সেটি হয়নি। তবে সেতুটি নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।

জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার লিমন বাসসকে বলেন, বগা ফেরিঘাটে একটি সেতু নির্মাণ স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এই ব্রিজটির নাম হবে নবম বাংলাদেশ-চীন ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০২১ সালের মার্চ মাসের দিকে বাংলাদেশ-চীন যৌথ উদ্যোগে ফিজিবিলিটি স্টাডি টিম কাজ শুরু করে। সেই ফিজিবিলিটি রিসার্চের কাজ শেষ হয়েছে।

বাসসকে এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ এবং এর মূল্য সংযোজনপূর্বক ডিপিটি প্রণয়নের কাজ আমরা দ্রুত শুরু করতে পারবো। এটি অনুমোদন হলে আমরা কাজ দ্রুত শুরু করবো।