বাসস
  ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৫৬

অর্থনীতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বচ্ছতা আগামী সরকারগুলোর জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে: দেবপ্রিয়

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: সিপিডি

ঢাকা, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) :  সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর বিশিষ্ট ফেলো ও সিটিজেনস প্ল্যাটফর্ম ফর এসডিজিএস, বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার অধিকতর স্বচ্ছতা চালু করেছে, যা পরবর্তী সরকারগুলোর জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে প্রমাণ-ভিত্তিক স্বচ্ছতা আনয়নের মাধ্যমে সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হয়েছে। সুতরাং, এটি (এ সরকারের) একটি মৌলিক অবদান।’

রাজধানীর সিপিডি সেন্টারে বাসসের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও শ্বেতপত্র খসড়া কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

দেবপ্রিয় বলেন, শ্বেতপত্র প্রকাশের পর এখন ‘সবাই জানে’ যে, বর্তমান সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে এমন একটি অর্থনীতি পেয়েছে, যা কাঠামোগত চ্যালেঞ্জ ও নীতিগত সমস্যা দ্বারা জর্জরিত।

তিনি আরো বলেন, ‘সুতরাং, মানদণ্ড পরিস্থিতি উপলব্ধি করা এই সরকারের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ এবং আমি মনে করি, এখন সরকার ও সমাজ উভয়ই গত দেড় দশক ধরে এই দেশে সরকারি তহবিলের লুণ্ঠনের পরিমাণ সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে।’

এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কৃতিত্ব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আশা করি স্বচ্ছতার এই ধারা পরবর্তী সরকারগুলোকে অতীতের অব্যবস্থাপনার চর্চা থেকে বিরত রাখতে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।’
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর বিশিষ্ট ফেলো আরও বলেন, শ্বেতপত্রে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীগুলোর দুর্নীতির ব্যাপক মাত্রা উন্মোচিত হয়েছে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, এই গোষ্ঠীগুলোতে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলারা অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর ফলে বাংলাদেশ প্রথমে একটি পুঁজিবাদে চক্রে ও পরে একটি লুণ্ঠনতন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।

‘শ্বেতপত্রে প্রকাশিত পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতি ও অপকর্মের ফিরিস্তি ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ ও ‘দ্য ইকোনমিস্ট’সহ শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তুলে ধরেছে।’

সরকারের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার মানদণ্ড পরিস্থিতি নির্ধারণের পর সরকারকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা ও সুসংহতকরণের কাজ শুরু করতে হবে। এ জন্য অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া প্রতিরোধ করার পাশাপাশি জাতীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন রোধ করতে হবে।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমরা দেখছি যে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখা হচ্ছে এবং বিনিময় হার মূলত স্থিতিশীল হয়েছে। যেহেতু বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা এখন আরও বাজার-ভিত্তিক, তাই ওঠানামা হবে, তবে বিনিময় হারে কোনও বড় ধাক্কা আসবে বলে আশা করা যায়।’

তিনি আরো বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার আরেকটি প্রধান বিষয়, অর্থাৎ বাজারে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের ফলাফল এখনো সুস্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ কমানোর প্রচেষ্টায় মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব এখনও খুব দুর্বল।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার অনেক দুর্বলতার সমাধান প্রাতিষ্ঠানিক ও নিয়ন্ত্রকমূলক সংস্কারের মধ্যে নিহিত।

অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘কঠিন সংস্কারগুলো সম্পন্ন করা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তৃতীয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে, এই ধরনের সংস্কারের সাফল্য ভবিষ্যতে দেশের টেকসই উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে।