শিরোনাম
ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : প্রধান বিচারপতি ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বাসসকে বলেন, বিচার বিভাগ সংস্কার রোডম্যাপ পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে দেশে বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করা যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট শপথ নেন বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তিনি দেশের বিচার বিভাগের মানোন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার কোর্ট ইয়ার্ডে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল এবং দেশের জেলা আদালতসমূহের বিচারকগণের উপস্থিতিতে বিচার বিভাগ সংস্কার যুগোপযোগী করতে 'রোডম্যাপ' ঘোষণা করেন।
রোডম্যাপে অন্যান্য বিষয়ের সাথে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠন করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। গত ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইন, বিধি-বিধান, উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত, প্রথাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিষদ গবেষণাপূর্বক একটি প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়।
গণসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, বিচারপ্রার্থীদের দ্রুত ও নির্বিঘ্নে বিচারিক সেবা দিতে দুইটি হেল্পলাইন নাম্বার চালু করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আগের হেল্পলাইন নাম্বার (০১৩১৬১৫৪২১৬) এর পাশাপাশি নতুন (০১৭৯৫৩৭৩৬৮০) হেল্পলাইন নাম্বারটিতে বিচার বা সেবা প্রার্থীরা তাদের অভিযোগ, পরামর্শ জানাতে পারবেন।
প্রধান বিচারপতির বিচারপ্রার্থী ও বিচার বিভাগের জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের অন্যতম হলো 'হেল্পলাইন চালু'।
মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে সম্পূর্ণ কাগজমুক্ত (পেপার ফ্রি) বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু করা হয়েছে। সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুত করে পেপার ফ্রি বিচারিক কার্যক্রম শুরু একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব তত্ত্বাবধায়ন ও উদ্ভাবনে ওই বেঞ্চের সকল কাগজাদি অনলাইনে জমা প্রদানের অনলাইন প্লাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়। ২০২৫ সালে পর্যায়ক্রমে সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বেঞ্চসমূহেও পেপার ফ্রি কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রধান বিচারপতির রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদে দেশের জেলা আদালতসমূহেও সম্পূর্ণ পেপার ফ্রি বিচারিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আশা প্রকাশ করেছেন।
মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বচ্ছতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উৎকর্ষতা আনয়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে বিচার বিভাগ সংস্কারের 'রোডম্যাপ' ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের অর্থপূর্ণ সংস্কার নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ঘোষিত হয় রোডম্যাপে। পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে স্বাধীন কাউন্সিল গঠন, অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। ঘোষিত রোডম্যাপের আলোকে ই-জুডিশিয়ারি বাস্তবায়নে প্রধান বিচারপতি বদ্ধপরিকর। দেশের উচ্চ আদালত ও জেলা আদালতসমূহের বিচারপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে ই-জুডিশিয়ারির আওতায় আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
গণসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, আশা প্রকাশ করা যায় যে, শিগগিরই লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের রুটিন ভেটিং সাপেক্ষে জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল অধ্যাদেশটি চূড়ান্ত হবে।