শিরোনাম
রংপুর, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : মাঘের শুরুতে রংপুরে আবারও তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা দেখা দিয়েছে। এ ঘন কুয়াশার কারনে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষক। ধারাবাহিকভাবে এমন আবহাওয়া থাকলে বীজতলার ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন রংপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
যদিও দিনের বেলা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো থাকায় এখন পর্যন্ত তেমন ক্ষতি হয়নি, তবে বীজতলা যেন নষ্ট না হয়-এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে, বীজতলা নষ্ট হলে বোরো ধানের চারার সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন কৃষকরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে রংপুর জেলায় এক লাখ ৩২ হাজার ৭৪৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই লক্ষ্য পূরণে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে বীজতলায় ধানের বীজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৫০০ হেক্টর বেশি বীজতলা এবারে রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
গত সপ্তাহে বিরতি দিয়ে আবারও তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারনে সরেজমিন দেখা গেছে, বোরো ধানের বীজতলার অধিকাংশ চারাই লালচে হলুদ হচ্ছে। লালচে হওয়ার পর আস্তে আস্তে পাতার আগা শুকিয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারনে অনেক বীজতলায় এখনও ভালো করে বীজ গজায়নি। আবার অনেক স্থানে গজালেও সুস্থ-সবল হয়ে বড় হচ্ছে না। বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা থেকে অনেকেই কৃষি অফিসের পরামর্শে রাতে বীজতলায় পানি রাখছে এবং সকালে তা সরিয়ে ফেলছে। আবার অজ্ঞতাবশত অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্টের পথে।
রংপুর নগরীর খটখটিয়া এলাকার বাসিন্দা মনির বলেন, গত বছর বীজতলা একেবারে নষ্ট হয়ে গেলেও এবার এখনও নষ্ট হয়নি। তবে এরকম ঘন কুয়াশা থাকলে বীজতলা নষ্ট হবে। কৃষি অফিস থেকে অবশ্য বীজতলা যেন নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেছেন। আমরা সেই পরামর্শ অনুযায়ী বীজতলার পরিচর্যা করছি।
পশ্চিম নীলকণ্ঠ গ্রামের কৃষক রহমত আলী বলেন, গত সপ্তাহে বীজতলার সব পাতা সবুজ ছিল। কিন্তু চলতি সপ্তাহে রাতের দিকে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশার কারনে লালচে ধরেছে। এখনও পুরোপুরি লালচে হয়নি। তবে এমন আবহাওয়া থাকলে নষ্টের আশঙ্কা তৈরি হবে।
ধাপচিকলী ভাটা মাষ্টারপাড়ার সাহানুর রহমান বলেন, আগাম বোরো ধান চাষাবাদের জন্য যে বীজতলা আগে তৈরী করা হয়েছে, সেগুলো রোপণও শেষ হয়েছে। এখনও অনেক জমিতে বীজ রোপণের বাকী রয়েছে। সেই বীজতলাগুলো নিয়ে চিন্তায় আছি। এ সপ্তাহে ঘন কুয়াশা শুরু হয়েছে। যদিও ঘন কুয়াশার কারনে বীজতলা এখনো নষ্ট হয়নি। তবে এরকম আবহাওয়া থাকলে বীজতলা নষ্ট হতে বেশিদিন লাগবে না।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক রিয়াজ উদ্দিন বাসস কে জানান, রংপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা বিদ্যমান। আর এ ঘন কুয়াশার কারনে বীজতলা নষ্ট হয়। কিন্তু এখনও বীজতলা নষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা তৈরী হয়নি। কারন, দিনের বেলা পর্যাপ্ত সূর্যের আলো রয়েছে। সূর্যের আলো পর্যাপ্ত না থাকলে আর ঘন কুয়াশা থাকলে বীজতলা নষ্ট হতে পারে। এজন্য কৃষি অফিস থেকে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি নিয়মিত। সেই সঙ্গে মাঠে মাঠে গিয়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখছেন আমাদের কৃষি কর্মকর্তা। কৃষকরাও আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। যার কারনে বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা নেই।
এসময় বীজতলা ভালো রাখার পরামর্শে তিনি বলেন, বীজতলা নষ্ট হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে তীব্র শীত। এজন্য রাতের বেলায় বীজতলায় পানি রাখতে হবে এবং দিনের বেলায় পানিটা সরিয়ে ফেলতে হবে। তাহলে এটি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। এসব বোরো ধানের বীজতলা রক্ষার জন্য ইউরিয়া ও জিপসাম সার প্রয়োগের পাশাপাশি প্রতিদিন বীজতলার কুয়াশা ঝেড়ে দিতে হবে। সম্ভব হলে চারাগুলোকে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এসব পরামর্শ মানলে বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না বলে জানান তিনি।