বাসস
  ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:০৩

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থতার খেসারত দিতে হবে সংস্থাগুলোকে : ফাওজুল কবির

শনিবার চট্টগ্রামে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির। ছবি : পিআইডি

চট্টগ্রাম, ১৮ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান করতে আমরা একটা কর্মপরিকল্পনা স্থির করব। সেই কর্মপরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দেয়া হবে। তাদেরকে দায়দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো অজুহাত কিন্তু আর শোনা হবে না। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে সংস্থাই ব্যর্থ হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ব্যর্থতার খেসারত দিতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক ও চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগরীর দীর্ঘদিনের সমস্যা জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান খুঁজতে চার উপদেষ্টাকে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তারই অংশ হিসেবে আজ তিন উপদেষ্টা চট্টগ্রাম নগরীর জামালখান খাল, মির্জা খাল, বারইপাড়াখাল, ও চাক্তাইখাল পরিদর্শন করেন।

আগামীকাল রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে বাস্তবায়নকারী বিভিন্ন সংস্থা ও অংশীজনদের নিয়ে সার্কিট হাউসে বিশেষ সমন্বয়সভা অনুষ্ঠিত হবে চার উপদেষ্টার উপস্থিতিতে।

অন্যবারের উদ্যোগের সঙ্গে এবারের উদ্যোগের পার্থক্য হবে জানিয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা প্রাকৃতিক বন্যা নয়, এটা একটা মনুষ্য সৃষ্ট দূর্যোগ। নগরবাসী খাল ভরাট করে বিল্ডিং তুলেছেন, খালকে ময়লা ফেলার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছেন। নিজে নিজে তো আর কেউ বিল্ডিং তুলতে পারেনা। নগর প্রশাসনের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, সবার নীরব কিংবা সরব সম্মতি নিয়ে এটা করা হয়েছে। এজন্যই জলাদ্ধতা নিরসন কাজটা বেশ কঠিন হয়ে গেছে।
 
তিনি বলেন, আমরা আজকে সরেজমিনে দেখতে আসছি আগামী বর্ষার আগে কি কি করা যায়, সেটা দেখার জন্য। যাতে অন্তত একটা দৃশ্যমান উন্নতি হয়। ১১ বছর ধরে এই প্রকল্প চলছে। এত বছর হয়ে গেল এটা সমাধান হয়ে যাওয়া উচিত ছিল।

উপদেষ্টা জানান, এখানে অনেকগুলো মামলা আছে। মামলাসহ প্রতিবন্ধকতাগুলো নিরসনে কি করা যায়, সেটা আমরা দেখব। কোথায় কোথায় জমি অধিগ্রহণ করা প্রয়োজন সেটাও দেখা হবে।

চট্টগ্রাম নগরে ৭১টি খাল আছে, তারমধ্যে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ চলছে ৩৬টি খালে, বাকি খালগুলো সংস্কার না হলে জলাবদ্ধতা আদৌ কি নিরসন হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, ‘বাকি খালগুলোর ব্যাপারেও আমরা আগ্রহী। কিন্তু কথা হচ্ছে, আমার তো আগের কাজের হিসাব নিতে হবে। সেটা ফলপ্রসু হয়েছে কিনা তা তো দেখতে হবে। প্রকল্প বানিয়ে আমি শুধু খাল খননই করে যাব, এটাতো কোনো কাজের কথা হয় না। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে যেই টার্গেট দেব, সেটা কতটা অর্জন হল, সেটা দেখতে হবে। যদি অর্জন করতে না পারেন, কেন পারলেন না, এটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা আছে কিনা দেখব। এবার কিন্তু কেউ দায় থেকে রেহাই পাবেন না।’
 
এ সময় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, খালগুলো ভরাটের তিনটা বড় বড় কারণ। একটা হচ্ছে, ভুমি অফিসের সঙ্গে যোগসাজস করে খালগুলো বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেকর্ড হয়ে গেছে। সেখানে বড় বড় বিল্ডিং উঠে গেছে। আজকে তিনটা স্পটেই আমরা দেখলাম, কিছু কিছু বিল্ডিংয়ের কিছু অংশ ভাঙতে হয়েছে। দ্বিতীয় সমস্যাটা হচ্ছে পাহাড় কাটার ফলে মাটিগুলো এসে পড়তেছে খালে, ফলে খালের প্রবাহ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। আরেকটা হচ্ছে পলিথিন এবং প্লাস্টিক। তিনটাই জটিল সমস্যা।

পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিকল্প কি সেই প্রশ্ন তোলার আমাদের বাংলাদেশে সুযোগ নাই উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদারা যেভাবে বাজার করেছেন, আমরাও সেইভাবেই করবো। সেটাই বিকল্প।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, বীর প্রতীক সাংবাদিকদের বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পে প্রতিবন্ধকতাগুলো কি কি, তা সরেজমিনে দেখলাম। 

আগামীকালের সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট সবার কাছ থেকে আরও বিশদ আমরা জানব। নগর পরিকল্পনাবিদসহ চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাসকারী যারা দীর্ঘসময় ধরে এসব নিয়ে কাজ করছে তাদের কাছ থেকেও পরামর্শ নেওয়া হবে।

জলাবদ্ধতার জন্য চট্টগ্রাম নগরে বসবাসকারীরাও কম দায়ী নয় উল্লেখ করে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা, দখল-দূষণ করার সঙ্গে জড়িত নগরবাসীকেও এর দায় নিতে হবে। এই দূর্যোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবারই সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তাহলেই সুন্দর শহরটা আরও সুন্দর হবে।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম শহর সবারই। শহরটাকে বাসযোগ্য করতে হলে সব সেবা প্রদানকারী সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সবাইকে নিয়ে চট্টগ্রামকে একটা সুন্দর শহরে পরিণত করতে হবে।