শিরোনাম
।। ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন।।
নাটোর, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : ২৫০ শয্যার নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমকে ডিজিটাল অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে । ইতোমধ্যে ৫৩ হাজার ৮৬৩ জন সেবা গ্রহিতা স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের নিবন্ধনভুক্ত হয়েছেন। এর ফলে সেবা প্রদানে গতিশীলতা এসেছে, এসেছে স্বচ্ছতা, দূর হয়েছে দালালদের দৌরাত্ম।
হাসপাতালের অন্তঃবিভাগ, জরুরী ও বহিঃবিভাগের সেবা গ্রহিতারা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম নিবন্ধন নম্বর প্রদান করে টিকেট কাউন্টারে নিবন্ধিত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে ৫৩ হাজার ৮৬৩ জন সেবা গ্রহীতা নিবন্ধনভুক্ত হয়েছেন। প্রতিনিয়ত নিবন্ধিত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । ইন্টারনেটের গতি কম অথবা অনিবার্য কোন কারণে নিবন্ধনের অপেক্ষমান তালিকায় আছেন আরো ৩৫ হাজারের অধিক সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তি।
নিবন্ধিত সেবা প্রত্যাশীর নিবন্ধন নম্বর স্ক্যান করে প্যাথলজি পরীক্ষার বিল কাউন্টারে দ্রুত বিল গ্রহণ করা হচ্ছে । ফার্মেসি কাউন্টারেও ঐ নম্বর স্ক্যান করে দ্রুত ওষুধ প্রদান করা হচ্ছে। ফার্মেসি কাউন্টারের মেডিকেল টেকনিশিয়ান রায়হান উদ্দিন এবং প্যাথলজি বিল কাউন্টারের ইনচার্জ শাহানা আক্তার জানান, ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিটের মধ্যে একজন ব্যক্তির কাংখিত সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে, যদি ইন্টারনেট বা সার্ভারে কোন সমস্যা না থাকে।
ষ্টোর কিপার রেজাউল করিম জানান, বছরে এ হাসপাতালে আনুমানিক আট কোটি টাকার ওষুধ প্রদান করা হয়। অটোমেশন চালু হওয়ায় এক নিমিষেই বুঝতে পারছি ষ্টোরে কি কি ওষুধ আছে, কোন ওষুধের চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে, কোন ওষুধ কাউন্টারে দিতে হবে। ‘এখন প্যাথলজিতে শতভাগ রিপোর্ট কম্পিউটারে তৈরী করা হচ্ছে, তাই কাজে গতি এসেছে, রিপোর্টের মানও উন্নত হয়েছে’, জানালেন ল্যাবরেটরির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শহিদুল ইসলাম।
সেবা নিতে আসা কুলসুম বেগম জানান, লাইনে দাঁড়ানোর পরে টিকেট কাউন্টার পর্যন্ত পৌঁছলে এক মিনিটেই ডিজিটাল টিকেট পেয়েছি। এ পদ্ধতি সহজ, সুন্দর। ‘বিল কাউন্টারে টাকা জমা দিয়ে প্যাথলজিতে এসে দেখি, আমার আসার আগেই আমার বিল পরিশোধের তথ্য অনলাইনে চলে এসেছে, তাই অল্প সময়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা করতে পারলাম’-জানান রুহুল আমিন।
হাসপাতালের ডেন্টাল বিভাগ, শিশু বিকাশ কেন্দ্র এবং এনসিডিসি বিভাগে রোগীর ব্যবস্থাপত্র কম্পিউটারে প্রদান করা হচ্ছে । পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগেও একই পদ্ধতিতে ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা হবে। এজন্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রেখেছে হাসপাতালের অটোমেশন কার্যক্রম বাস্তবায়ন বিভাগ।
অটোমেশন কার্যক্রমের সিস্টেম সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ খালেদ মোশাররফ জানান, ইতোমধ্যে হাসপাতালের ১৩ জন চিকিৎসক এবং ষ্টোর বিভাগ, , প্যাথলজি, জরুরী বিভাগ, টিকেট ও বিল কাউন্টার, এনসিডিসি বিভাগ ও ওয়ার্ডে কর্মরত ৩২ ব্যক্তিকে অটোমেশন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ চলমান আছে। হাসপাতালের সকল কার্যক্রম দ্রুত অটোমেশনের আওতায় আনতে আমরা কাজ করছি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, প্রতিদিন গড়ে এক হাজার রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে অটোমেশনের আওতায়।
নাটোরের সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মোহাম্মদ মুক্তাদির আরেফিন বাসস’কে বলেন, অটোমেশনের আওতায় আসার ফলে সেবা গ্রহিতাদের সকল তথ্য হাসপাতালের সার্ভারে জমা থাকছে। জমাকৃত রোগীর স্বাস্থ্য বিবরণী পরবর্তী চিকিৎসা গ্রহণ কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সর্বোপরি আগামীতে সরকারের সর্বজনীন হেলথ কার্ড সিস্টেম চালু করার পরিকল্পনা কার্যক্রমে নাটোর সদর হাসপাতালের নিবন্ধিত সেবা গ্রহিতাদের হেলথ কার্ড পাওয়া সহজ হবে। সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা এসেছে। সর্বোপরি হাসপাতাল প্রাঙ্গনে দালালদের দৌরাত্ম নির্মূলে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।