শিরোনাম
রংপুর, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের (এমআরসি) প্রধান বিশিষ্ট সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেছেন, সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ছাড়া সৎ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। এ জন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সারাদেশের সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করছেন যে যেসব গণমাধ্যম তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা দেয় না, সেগুলো কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব গণমাধ্যমের মালিকরা তাদের বিজ্ঞাপনের হার বাড়িয়ে আয় করছেন, কিন্তু তাদের সাংবাদিকদেরকে বেতন দিচ্ছেন না।’
তিনি আজ রোববার নগরীর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কমিশনের বিভাগীয় পর্যায়ের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতাকালে মন্তব্য করেন।
গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. গীতিআরা নাসরিন, শামসুল হক জাহিদ, বেগম কামরুন্নেসা হাসান, মোস্তফা সবুজ এবং আবদুল্লাহ আল মামুন সভায় উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার প্রায় ১২০ জন গণমাধ্যমকর্মী সভায় উপস্থিত ছিলেন। তারা নতুন বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করতে পারে এমন মিডিয়া সংস্কারের পরামর্শ দেন।
প্রধান অতিথি বলেন, গণমাধ্যমকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার জন্য এই সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো যাতে যথাযথভাবে তাদের ভূমিকা পালনে সক্ষম হয়, কমিশন সেই উপযোগী নীতিমালা প্রণয়নে কমিশন সুপারিশ করবে। আইন-কানুন ও নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে অনুসরণ করে সাংবাদিকতার প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য হবে। সুস্থ প্রতিযোগিতা না থাকলে গণমাধ্যমের স্বাভাবিক বিকাশ সম্ভব না। গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ন্যূনতম একটি বেতনের নিশ্চয়তা থাকা দরকার। সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তা না থাকলে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকবে না।
গত ১৫ বছরের দুঃশাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কর্পোরেট হাউসগুলো তাদের রাজনৈতিক প্রভাব এবং সরকারের ফ্যাসিবাদী প্রবণতা প্রয়োগ করে জনস্বার্থ বাদ দিয়ে আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যমকে তাদের মালিকদের পক্ষে ব্যবহার করেছে। অন্যদিকে, স্বার্থান্বেষী মহল রাজনৈতিক ক্ষমতা, কালো টাকা এবং সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভাজনের সুযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পত্রিকার সার্ক্যুলেশন সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাতে এবং ডিএফপির মিডিয়া তালিকা তৈরিতে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সাংবাদিকদের প্রস্তাবগুলোর ওপর আমাদের সুপারিশগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জমা দেব। এই সুপারিশগুলো ভবিষ্যতে রেফারেন্স হিসাবে থাকবে।
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা গণমাধ্যমের সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। উপস্থাপিত প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে- মিডিয়া কমিশন গঠন; সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে পিআইবির শাখা অফিস স্থাপন; রাজধানীকেন্দ্রিক সাংবাদিক ও মফস্বল এলাকার সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধার ব্যবধান নিরসন; সকল মিডিয়াকে ওয়েজবোর্ডের নীতিমালা অনুসরণে বাধ্যকরণ; সাংবাদিকতা পেশার স্বীকৃতি প্রদান; সাংবাদিকদের দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখা; অনলাইন মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা; সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধমূলক আইন বাতিল; সাংবাদিকতার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ; ডিএফপি তালিকাভুক্তিকরণে দলীয় প্রভাব দূরীকরণ; সাংবাদিকদের একক পরিচিতি নম্বর প্রদান; সাংবাদিকদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসা; সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিতকরণ; বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ প্রভৃতি।