শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): আগামীকাল শহিদ আসাদ দিবস। স্বৈরাচার আইয়ুব খানের পতনের দাবিতে মিছিল করার সময় ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন আসাদ।
শহিদ আসাদ হলেন- ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলনের পথিকৃৎ তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের তিন শহিদদের একজন। অন্য দু’জন হলেন - শহিদ রস্তম ও শহিদ মতিউর।
শহিদ আসাদ ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে মৃত্যুকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে এম এ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন। শহিদ আসাদ তৎকালীন ঢাকা হল (বতর্মান শহীদল্লাহ হল) শাখার পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে এবং পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন, ঢাকা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আসাদের মৃত্যু পরিবেশকে আরও ঘোলাটে করে তুলে ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় রূপান্তরিত হয়। যা বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে তরান্বিত করে।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রদের ১১ দফা দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র সংগঠনের নেতারা, যাতে প্রধান ভূমিকা রাখেন শহিদ আসাদ। ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ছাত্ররা দেশব্যাপী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ডাক দেয়। ফলে গভর্নর হিসেবে মোনেম খান ১৪৪ ধারা আইন জারি করেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ২০ জানুয়ারি দুপুরে ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের পার্শ্বে চাঁন খাঁর পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন আসাদুজ্জামান। পুলিশ তাদেরকে চাঁন খাঁর ব্রীজে বাঁধা দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তু বিক্ষোভকারী ছাত্ররা সেখানে প্রায় এক ঘন্টা অবস্থান নেয় এবং আসাদ ও তাঁর সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। ওই অবস্থায় খুব কাছ থেকে আসাদকে লক্ষ্য করে এক পুলিশ অফিসার গুলিবর্ষণ করে। তৎক্ষণাৎ গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাজারো ছাত্র-জনতা আসাদের মৃত্যুতে একত্রিত হয়ে পুনরায় মিছিল বের করে এবং শহিদ মিনারের পাদদেশে জমায়েত হয়। কেন্দ্রীয় প্রতিরোধ কমিটি তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ২২, ২৩ ও ২৪ জানুয়ারি সারাদেশে ধর্মঘট আহ্বান করে। ধর্মঘটের শেষ দিনে পুলিশ পুনরায় গুলিবর্ষণ করে। এতে আসাদের মৃত্যুতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান সরকার দু’মাসের জন্য ১৪৪-ধারা আইন প্রয়োগ স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৮ সালে শহিদ আসাদ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি স্বাধীনতা পদক পান।
বাংলাদেশের অনেক জায়গায় জনগণ আইয়ুব খানের নামফলক পরিবর্তন করে শহীদ আসাদ রাখে বিশেষত জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পার্শ্বে অবস্থিত আইয়ুব গেটের পরিবর্তে আসাদ গেট রাখা হয়।
প্রতি বছরই জানুয়ারির ২০ তারিখে শহিদ আসাদের দেশমাতৃকার সেবায় মুক্তি এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে তাঁর মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে বাঙালি জাতি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গভীর শ্রদ্ধায় শহিদ আসাদ দিবস পালন করে থাকে।
দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল বিভিন্ন ছাত্র ও যুব সংগঠন নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।