শিরোনাম
ঢাকা, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : মাদকের কুফল ও প্রতিকারে ইমাম-খতিবগণ, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছেন দেশের আলেম-উলামাগণ।
তারা বলেছেন, সরকার এই কমিশন গঠনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে মাদক বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
এতে ইমাম-খতিব ও আলেম সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সরকারকে সহযোগিতা করবে।
আজ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে মাদানী মজলিস বাংলাদেশ আয়োজিত 'দেশ ও জাতির কল্যাণে মাদকের কুফল ও প্রতিকার’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সময় তারা সরকারের কাছে নয় দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মুহাম্মদ ইউছুফ বলেন, মাদক এখন সমাজে ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মদ, হেরোইন, আফিমসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ইয়াবা সমাজের সব স্তরে পৌঁছে গেছে। ইয়াবা এখনই নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে এই জাতিই ক্রাস করবে। এই ইয়াবা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে।
গ্রামেগঞ্জে ও শহরে ইয়াবা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের কাছে সহজলভ্য হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এ জন্য তিনি সরকারের পাশাপাশি সমাজের আলেম-উলামাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে সেমিনারে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, দেশের ৬৮টি কারাগারে বন্দিদের মধ্যে ২৫ ভাগই আসে মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত থাকার কারণে। এদের শাস্তি অল্প সময় হওয়ার কারণে যতটুকু সম্ভব কারা কর্তৃপক্ষ এদের কাউন্সেলিং ও চিকিৎসা দিয়ে থাকে। তিনি মাদক সমস্যা নির্মূলে পরিবারের পাশাপাশি সমাজের মসজিদ, মাদ্রাসা, পাড়া ও মহল্লায় ইমাম-খতিব, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক মাদানী মজলিস বাংলাদেশ’র সভাপতি শায়খ মুফতি হাফীজুদ্দীন বলেন, মাদক বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে ক্রমশ সারাদেশে বিস্তার লাভ করছে। নতুন প্রজন্ম এর মাধ্যমে ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা দেশের আইনশৃঙ্খলা, জনগণের নীতি নৈতিকতাবোধ এবং পারিবারিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর মারাত্মকভাবে কুপ্রভাব ফেলছে। এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে দেশব্যাপী এবং বিশেষত নতুন প্রজন্মকে উদ্ধার ও মুক্ত রাখার জন্য সরকার, সুশীল সচেতন নাগরিক এবং আলেম-উলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মীয় ব্যক্তিদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে সুচিন্তিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মাঠ পর্যায়ে কর্ম-তৎপরতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন এবং উপস্থিত ছিলেন ভারত থেকে আগত আওলাদে রাসুল সায়্যিদ আফফান মানসুরপুরী, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়ার ভাইস-প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল গাফফার, গবেষক ও শিক্ষাবিদ মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক নদভী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক শায়খ মুসা আল হাফিজ, বিশিষ্ট শিল্পপতি ফারুক তালুকদার সোহেল, কমান্ডার (অব.) মাহবুবুর রহমান, কমিশনার (ইনকাম ট্যাক্স) মিজানুর রহমান, মেজর জেনারেল (অব.) মহিউদ্দিন চৌধুরী মোহন, ক্যাপ্টেন (অব.) এস. এম. হেলাল, সাংবাদিক মশিউর রহমান খান এবং শিল্পপতি গোলাম দস্তগীর বাবু।
সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা বলেন, নেশায় যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। যুব সমাজের ভালো-মন্দ যাচাইয়ের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তারা শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে ছোটবেলা থেকেই মাদকের ভয়াবহতা তুলে ধরতে হবে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলার ওপর জোর দেন বক্তারা।
সেমিনারে মাদকের কুফল ও প্রতিকার শিরোনামে একটি গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুফতী হাফীজুদ্দীন। এ সময় ‘মদ ও মাদকতা’ নামক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।