শিরোনাম
//শাহজাহান নবীন//
ঝিনাইদহ, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার সদর উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা শামসুজ্জামান কৃষিতেই স্বপ্ন দেখেন।সখের বশে শুরু করেছিলেন পেয়ারা চাষ। চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয় ও অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে গড়ে তুলেছেন ৭ বিঘা আয়তনের পেয়ারা বাগান।
সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা শামসুজ্জামানের বাগানে এখন মাল্টা, হলুদ কমলা, বাতাবি লেবুসহ নানা প্রজাতির ফলের উৎপাদন হচ্ছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করার পর তিনি পেয়েছেন সাফল্য। বহু যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছেন তিনি।
পেয়ারাবাগানে গেলে শামসুজ্জামান কথা বলেন প্রাণ খুলে। জানান নানা অজানা কথা।
শামসুজ্জামান বলেন, পেয়ারা ও ড্রাগন চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায় কোটচাঁদপুরে একটি বাগান দেখার পরে। তারপর আমি বাড়িতে এসে পরিত্যক্ত অল্প পরিমাণ জমিতে পরীক্ষামূলক পেয়ারা চাষ করি। জাত নির্ণয়ের জন্য চাষ শুরু করলেও পরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পেয়ারা আবাদ শুরু করেছি। ৭ বিঘা জমিতে আমার ১২০০ পেয়ারা গাছ রয়েছে। লেবু গাছ আছে ৭০০। লেবু গাছে এখনো ফল ধরেনি। পেয়ারা গাছগুলো বছর জুড়ে আশানুরুপ ফল দিচ্ছে।
ছেলের পেয়ারা চাষের প্রথম দিকের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে শামসুজ্জামানের বাবা মো. ইউসুফ আলী বিশ্বাস বলেন, আমি সারাজীবন চাষাবাদ করেছি। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখেছে আমার কৃষি উৎপাদনে অর্জিত টাকা পয়সায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করার পর শামসুজ্জামান পেয়ারা চাষ শুরু করে। এ নিয়ে নানান মানুষ নানান কথা বললেও আমি তাকে উৎসাহ দিয়েছি সবসময়। ছেলের তৈরি বাগানের ফল দেখলে ভালো লাগে।
বাগান ঘুরিয়ে দেখানোর সময় গল্পে গল্পে উদ্যোক্তা শামসুজ্জামান জানান, প্রতি বিঘা পেয়ারা চাষে মজুরি খরচ, পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়। পেয়ারা গাছে তিনি কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করেন। নিজেই শিখেছেন কম্পোস্ট তৈরির প্রক্রিয়া। বাগানের একপাশে খোলা জায়গায় কম্পোস্ট গাদা বানিয়েছেন। গোবর, ঝরাপাতা, খুড়কুটো, পানি ও সামান্য রাসায়নিক দ্রবণের সংমিশ্রণে নিজেই কম্পোস্ট সার তৈরি করেন।
তিনি জানান, ২০ হাজার টাকা খরচ করে বানানো কম্পোস্ট সার ৭ বিঘা জমিতে প্রয়োগ করলে তার কার্যকারিতা ১ বছর সক্রিয় থাকে। কম্পোস্ট সার প্রয়োগের ফলে বাগানে রাসায়নিক সারের ব্যবহার প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যায়। এতে ফলের উৎপাদন বাড়ে। ফলের পুষ্টিগুণাগুণও সমুন্নত থাকে। বাগানের পরিচর্যায় প্রতিদিন ৪ জন শ্রমিক নিয়োগ করা আছে। তারা বাগানের সার্বিক পরিচর্যার বিষয়টি দেখভাল করেন। এছাড়া ফল সংগ্রহ, প্রুনিং (কা- ভেঙ্গে নতুন ডগা গজানোর পদ্ধতি) করার সময় শ্রমিক বেশি লাগে। সব মিলিয়ে মৌসুম জুড়ে গড়ে প্রতি মাসে অন্তত ১২০ জন শ্রমিক প্রয়োজন হয়।
শামসুজ্জামানের বাগানে কাজ করেন সুমন মিয়া (২৫), সাকিব (২২) ও শাহিন (২২)। তারা জানান, বাগানে নিয়মিত তদারকি করতে হয়। তারা কয়েকজন মিলে বাগানে ঘুরে ঘুরে সব পর্যবেক্ষণ করে।
নিয়ম করে সেচ দিতে হয়। প্রুনিং করতে হয়। এ বাগান তৈরির পর এখানে সুমন, সাকিব, শাহিনের মতো অনেকেরই কাজের সন্ধান মিলেছে।
বেকার তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শামসুজ্জামান বাসস’কে বলেন, আমি চাইলেই জমি বর্গা দিয়ে আরাম আয়েশে থাকতে পারতাম। কিন্তু আমি নিজে চাষাবাদ শুরু করায় অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এটাই আমার ভালো লাগে।
সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নূর-এ-নবী বাসস’কে বলেন, শামসুজ্জামান উদ্যোমী এক তরুণ। তিনি প্রায় ৭/৮ বছর ধরে পেয়ারা চাষ করছেন। আমরা নানা সময়ে আমাদের কর্মীদের মাধ্যমে তাকে পরামর্শ দিয়েছি। কম্পোস্ট সার উৎপাদন, চারার পরিচর্যা, জাত নির্ণয়, ফল সংগ্রহ ও প্রুনিং করার জন্য আমরা চাষীদের পরামর্শ সহায়তা দিয়ে থাকি।
তিনি আরও বলেন, শামসুজ্জামানের মতো বেশ কয়েকজন তরুণ যুবক কৃষি উদ্যোক্তা হয়েছেন। উদ্যোক্তারা মাশরুম, ধান, সবজিসহ নানা ফল ফসল আবাদের পাশাপাশি বীজও উৎপাদনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আরও জানান, জেলার কোঁটচাদপুর উপজেলা শহরে ফল বিক্রি করার জন্য আন্তর্জাতিক মানের বড় পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। ওই বাজারে দেশের নানা প্রান্তের ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা বাজার থেকে ড্রাগন, পেয়ারা, মাল্টাসহ জেলায় উৎপাদিত অন্যান্য সব ফল কিনেন। প্রতি বিঘা জমিতে ভালো জাতের পেয়ারা লাগালে খরচাদি বাদ দিয়ে বছরে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।