বাসস
  ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৭

গায়েবি মামলা প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে : ড. আসিফ নজরুল

মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। ছবি : পিআইডি

ঢাকা, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশের ২৫ জেলায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দায়ের করা আড়াই হাজারের বেশি ‘গায়েবি’ মামলা চিহ্নিত করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে মামলাগুলো প্রত্যাহারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আইন-আদালত সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগের কথা জানান।

তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে বহু ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এসব মামলা চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সারাদেশের আদালতসমূহে থেকে বিগত আমলের অধিকাংশ আইন কর্মকর্তা আদালত থেকে পালিয়ে যান। এরপর কয়েক হাজার আইনজীবীর তালিকা থেকে সারাদেশে ৪ হাজার সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হয়েছে। এরপর বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা ‌‘হয়রানিমূলক’ ও ‘গায়েবি’ মামলা চিহ্নিত করে প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়

তিনি বলেন, ‘তবে এই উদ্যোগ (গায়েবি মামলা প্রত্যাহার) নিতে দেরি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২৫ জেলায় আড়াই হাজারের বেশি মামলাকে গায়েবি হিসেবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। এর বাইরেও অনেক থাকতে পারে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে এগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে গায়েবী মামলাগুলো প্রত্যাহার করা সম্ভব হবে।’

‘গায়েবি’ মামলা শনাক্তে কয়েকটি মানদণ্ড নির্ধারণের কথা তুলে ধরে আসিফ নজরুল বলেন, ‘যেমন, মামলাগুলো পুলিশ দায়ের করেছে কি না; বিস্ফোরক আইনে করা হয়েছে কি না; অস্ত্র আইনে করা কি না: বিশেষ ক্ষমতা আইনি হয়েছে কি না; কিংবা পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কি না।’

তিনি বলেন, গায়েবি মামলা প্রত্যাহারে এসব প্রবণতা আমরা নজরে রেখেছি। এসব মামলায় অনেক অজ্ঞাত আসামি থাকে। আমরা দেখেছি, মামলাগুলো হতো বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বড় বড় আন্দোলনের আগে-পরে। তিনি বলেন, তিনটি ‘ভুয়া’ নির্বাচনের আগে-পরেও হয়েছে। এসব ক্রাইটেরিয়ার ভিত্তিতে আমরা আড়াই হাজারেরও বেশি মামলা শনাক্ত করেছি। এগুলো প্রত্যাহার হবে আশা করছি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিবাহ সম্পাদনে আরোপিত একটি কর ছিল। আইন মন্ত্রণালয় এই অযৌক্তিক কর আরোপ বাতিল করেছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সাইবার আইন প্রত্যাহার কিংবা সংশোধন নিয়ে কাজ করছে তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের মতামত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ডিটেইল চিন্তা করছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে ওই আইনে যে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনটি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। এই আইনে দায়ের করা ৩৩২টি মামলা হল স্পিচ অফেন্স। ৫৭টি তদন্তাধীন। পাবলিক প্রসিকিউটরের এর মাধ্যমে ১১৩ টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে সব মামলা প্রত্যাহার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন আইন উপদেষ্টা।

আইন উপদেষ্টা বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর আজ গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য লোকদের বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হতো। যোগ্য বিচারক নিয়োগের সঙ্গে দেশের ১৮ কোটি মানুষের সুবিচার পাবার নিশ্চয়তা নিহিত। অভিজ্ঞ দল নিরপেক্ষ প্রকৃত যোগ্য ব্যক্তিরা যেন বিচারক হিসেবে নিয়োগ পান এ চাহিদা ও দাবি দীর্ঘ দিনের।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির অফিস থেকে ও সংস্কার কমিশন থেকে খসড়া দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত ২০০৮ সালের একটা খসড়া ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে চেষ্টা করেছি যতটা ভালো আইন করা যায়। এই আইনের জুডিশিয়াল এপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল রয়েছে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এ কাউন্সিল গঠিত হবে। আইন উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, হাইকোর্টের পরবর্তী বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া এ আইন অনুযায়ী হবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। এটি নিয়ে জাতীয় ঐক্যমত রয়েছে। পৃথক সচিবালয়ে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় আইন তৈরি এক মাসের মধ্যে করা হচ্ছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ৩৬ ধরনের ডকুমেন্ট আইন মন্ত্রণালয় সত্যায়ন করতো। ম্যানুয়ালি এ কাজ সম্পাদনের ফলের জনসাধারণকে অনেক হয়রানি পোহাতে হয়েছে। তা নিরসনে এ কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে অনলাইন হচ্ছে। এতে করে জনগণের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হচ্ছে।