শিরোনাম
রংপুর, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): কনকনে শীত আর ঘন কুয়াশায় বৃষ্টির মতো ঝরা শিশিরের দাপটে বিপর্যস্ত রংপুরের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ। সূর্যের দেখা না মিললেও শীতের মধ্যে সারাদিনই তাদের তাড়া করে ফেরে। তীব্র শীতের কামড়ে হাত-পা ঝিনঝিন করে ওঠে। হালকা বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু তারপরও জীবন তো থেমে নেই।
পেটের তাগিদ আর সংসারের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে নিত্যদিন খেটে খাওয়া মানুষরা কাকডাকা ভোরে ঘন কুয়াশাভেদ করে কনকনে শীতকে সঙ্গী করেই ছুটে চলেছেন কাজের সন্ধানে। এভাবেই তাঁরা লড়াই করে চলেছেন। শীত তাঁদের শরীর কাবু করতে পারে। কিন্তু মনের জোর কাবু করতে পারে না। এ যেন জীবনের অদম্য সংগ্রাম।
চন্দনপাট ইউনিয়নের চন্দনপাট গ্রামের দিনমজুর আল আমিন ও মহিপুর গ্রামের জহিরুল বলেন, ‘হামারগিলাক ইটভাটায় কাম করিতে খুব ভোরেই যাইতে হয়। ঠাণ্ডাত কাদায় হাত দিবার সময় মনে হয় শীত যেন হাড্ডির মধ্যে ঢুকে যাওচে। কাজ তো আর হারা বন্ধ করি রাখিবার পারি না। কাজ-কাম না করিলে সংসার চলিবে কেমন করি আর খামোইবা কী?’ৎ
গংগাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ও বেতগাড়ি গ্রামের কয়েকজন কৃষক জানান, এই কনকনে শীতে শরীর থেকে শীতের পোশাক খুলতে ইচ্ছে করে না। এরপরেও সকালে সাইকেল চালিয়ে কাজে যেতে গিয়ে শীতের কামড় যেন শরীর কাবু করে ফেলে। ঘন কুয়াশাভেদ করে সাইকেল চালানোও খুবই কষ্টকর।
রংপুর নগরীর কামারপাড়া বাসস্ট্যান্ডে রিকশাভ্যান চালক হেলাল ও সাদেক আলী জানান, শীতে এমনিতেই যাত্রী কম। তারওপর কুয়াশায় রাস্তাঘাট ফাঁকা। ভোরবেলা রাস্তায় কোনো মানুষ নাই। লোকজন না থাকার কারণে বাসস্ট্যান্ড যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় বসে থাকতে হয়।
রাজমিস্ত্রির কাজ করা মো. শাহীন মিয়া জানান, গত ক’দিন থেকেই শীত যেন হাড় ভেঙে দিচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে কাজ করা প্রায় অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নজরুল ইসলাম জানান, কুয়াশা আর শীত শুধু মানুষের জীবনকেই দুর্বিষহ করছে না। কৃষিতেও এর প্রভাব পড়েছে। বোরোধানের বীজতলায় যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। চারার ক্ষতি এড়াতে বীজতলায় পানি ছিটিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে কুয়াশার ফোঁটা সরিয়ে ফসল বাঁচানো যায়।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান বাসসকে বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় রংপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯২ শতাংশ। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৩ কিলোমিটার।