বাসস
  ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৫০

ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় হাওরাঞ্চলের কৃষকরা

ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।ছবি ; বাসস

তানভীর হায়াত খান 

নেত্রকোণা, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : চলতি বছর নির্ধারিত সময়ে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়ায় সময়মতো শেষ হওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলের কৃষকরা।

বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)’র কাজের অগ্রগতি ভালো হলেও অধিকাংশ বাঁধেই কাজ চলছে ধীর গতিতে। সেইসাথে গত কয়েক বছর পিআইসি সদস্যদের প্রভাবে বাঁধের কাছ থেকে মাটি উত্তোলন করায় সেগুলো এখন বাধেঁর জন্যই মারাত্মক হুমকি হয়ে দাাঁড়িয়েছে। 

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাঁধ নির্মাণের অগ্রগতি সন্তোষজনক, সময় মতোই শেষ হবে সব কাজ।  

মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, কলমাকান্দা, আটপাড়া ও বারহাট্টার আংশিক এলাকা নিয়ে নেত্রকোণার হাওরাঞ্চল গঠিত। প্রতিবছর হাওরে আগাম বন্যায় একমাত্র ফসল হানির শঙ্কায় থাকতে হয় কৃষকদের। এরমধ্যে মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, আটপাড়া, কলমাকন্দার হাওর এলকায় বোরো আবাদ শেষ করেছেন কৃষকরা। এখন চলছে পরিচর্যা। 

হাওরের একমাত্র ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে প্রতিবছরই নির্মাণ করা হয় অসংখ্য ডুবন্ত বাঁধ। এতে ব্যয় হয় কোটি কোটি টাকা। প্রায় দীর্ঘদিন প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ত করে একাধিকবার একই ধরনের পিআইসি হলেও চলতি বছর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন করে পিআইসি গঠন প্রক্রিয়ায় কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। এতে কিছু বাঁধের কাজের আশানরূপ অগ্রগতি হলেও  বেশির ভাগ বাঁধের কাজ এখনো পিছিয়ে। এতেই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। 

মোহনগঞ্জ উপজেলার গাগলাজুর ইউনিয়নের কামালপুর, জালালপুর, গাগলাজুরসহ হাওরের একাধিক কৃষক ও হাইজদা হাওর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মোর্শেদ আলম রঞ্জুল বলেন, এক সময় হাওরে একমাত্র ফসল ধান হলেও এখন ধানের পাশাপাশি নানা জাতের সবজির আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে মিষ্টি কুমড়া অন্যতম। বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম থাকা সত্বেও হাওরের বাঁধগুলো নির্মাণের ফলে গত কয়েক বছর ফসল হানি তেমন হয়নি। 

মোর্শেদ আলম বলেন, জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সবচেয়ে বড় বাঁধ চর হাইজদায় বেশকিছু অংশ স্থায়ী করা হয়েছে। বাকি অংশে গত কয়েক বছর পিআইসি প্রভাব খাটিয়ে বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি উত্তোলন করেছে। যা এখন বাঁধের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেগুলো ভরাট করা খুব জরুরী। অন্যথায় কোটি কোটি টাকার বাঁধ নির্মাণ হলেও বাঁধ ভেঙে ফসল হানির আশঙ্কা  থেকেই যাবে। 

হাইজদা বাঁধের একাংশের সভাপতি প্রকৃত কৃষক কাজী ইউসূফ ও সদস্য সচিব কৃষক মোঃ বাহারুল আলম জানান, কাজ দেরিতে শুরু করলেও এখানকার কাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে ইনশাল্লাহ। 

কিন্ত গত কয়েক বছর বাঁধের কাছে মাটি তোলায় এখন বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হাইজদা বাঁধ হাওরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁধ। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে পুরো জেলার ফসল হানির আশঙ্কা থাকে। তাই বাঁধগুলো নির্মাণের পাশাপাশি গর্তগুলোতে মাটি কিংবা বালু দিয়ে হলেও ভরাটের ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে বাঁধ নির্মাণ হলেও ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

গত বছর ১৮০টি পিআইসি হলেও এবার বাড়িয়ে ১৯১টি পিআইসির মাধ্যমে ১৪৬ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতে উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কাজ পেছালেও সময় মতোই শেষ হবে বলে নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারোয়ার জাহান। 

সারোয়ার জাহান বলেন, হাওরে বাঁধ নির্মাণ কাজ চলছে। অগ্রগতি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক। সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। সময়মতো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি। বাঁধগুলোর ঝুকিপূর্ণ স্থানগুলো নির্ধারণ করা হচ্ছে।  প্রয়োজনে সেগুলোও ভরাট করা হবে। 

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বাসসকে জানান, হাওরের ফসল রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

নেত্রকোণা জেলায় (অস্থায়ী) ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে ৩৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চলতি বছর প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪৬ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। বাঁধগুলো এই মার্চের প্রথম সপ্তাহেই শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।