শিরোনাম
॥ আবদুস সালাম আজাদ ॥
চাঁদপুর, ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : পড়াশোনার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়েছেন চাঁদপুরের উপমা। বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ভাই অন্যের দোকানে কাজ করেন। আর নিজে হলেন উদ্যোক্তা। এভাবে নিজ লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছেন জেলা শহরের পুরান বাজারের মেয়ে উপমা সাহা (২৪)।
নিজের হাতে তৈরি এন্টিক গহনা ও হাতের কাজ করে উদ্যোক্তা হিসেবে নজর কেড়েছেন তরুনদের। "ময়ূরাক্ষী " অনলাইন পেজের মাধ্যমে করেন নিজের ব্যবসা। তাকে দেখে অনেক শিক্ষার্থী ও বেকার তরুনী করছেন বিভিন্ন ধরনের কাজে।
উপমা সাহা শহরের পুরান বাজারে ২ নম্বর ওয়ার্ড হরিসভার বাসিন্দা। পিতা বিজয় কৃষ্ণ সাহা স্থানীয় বাজারে পান সুপারি বিক্রেতা, মা ঝর্না সাহা গৃহিনী। ১ ভাই ১ বোন তারা। বড় ভাই জনি সাহা স্থানীয় একটি মুদি দোকানে কাজ করেন।
উপমা সাহা চাঁদপুর সরকারি কলেজে এম এ অধ্যায়নরত। এর আগে পুরান বাজার মধুসুধন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক, পুরান বাজার ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০১৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও চাঁদপুর সরকারি কলেজে থেকে ২০২৪ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
ছোট বেলা থেকেই উপমা একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। কিন্তু ২০১৮ সালে এইসএসসি পাশের পরে বাবার সামান্য আয়ে আর সংসার চলে না দেখে মায়ের অনুরোধে বড় ভাই একটি মুদি দোকানে কাজ নেন। তখন উপমার পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সে তখন দুই তিনটি টিউশনি করে সংসারে সহযোগিতা করতেন। ওই টাকায় নিজে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন। এর মাঝে দেশে কোভিড ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য সারাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।এতে তার বাবার পান সুপারির ব্যবসায় আয় কমতে থাকে।
উপমা বলেন, মহামারির কারণে সংসারে টানাপোড়ন শুরু হয়। তখন চিন্তা করতে থাকি কি করা যায়। আমার বান্ধবী মধুরিমার পরামর্শে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে নিজের টিউশনির জমানো ৫০০ টাকা দিয়ে পূর্ব পরিচিত শহরের কালিবাড়ি হকার্স মার্কেটের একটি গহনার দোকান থেকে হাতে তৈরি এন্টিক গহনার জন্য মালামাল কিনে আনি।
৫০০ টাকায় আমি এন্টিং জিনিস তৈরির জন্য জামরিং, বিভিন্ন ধরনের এন্টিকের ডিজাইন, ঝুলপুতি, হুক, বিভিন্ন কালারের সূতা, টারসেল কিনে নেই। এগুলো দিয়ে ইউটিউব ভিডিও দেখে তৈরি করি গহনা। প্রথম পূজির মালামাল দিয়ে ১০ থেকে ১২ টি সেট গহনা তৈরি করি। এই গহনা গুলো আমার ‘ময়ূরাক্ষী’ ফেসবুক পেজে দিয়ে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমার গহনাগুলো বিক্রি হয়ে যায়। আমি তখন মাত্র ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা করে গহনার দাম দিয়ে প্রচার করি। সেখানে গহনা তৈরি, বিক্রির যাতায়াত খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ হয় ৩’শ টাকা।
সেই থেকে আমার চলা শুরু। এরপর থেকে ধীরে ধীরে আমার কাজের অর্ডার বাড়তে থাকে। আমি আমাদের শহরের মধ্যে থেকে প্রথমে অর্ডার নিতাম, কারণ আমার কোন সাহায্যকারী ছিলনো। তখন আমি নিজে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এগুলো পৌঁছে দিতাম। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে আমার পেজের মাধ্যমে কাজের প্রচার বেড়ে গেলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ও অর্ডার আসতে থাকে। তখন আমি অর্ডারগুলো কুরিয়ার করে তাদের কাছে পাঠাই।
এই উদ্যোক্তা বলেন, আমার কাজের পরিধিও বাড়ে আমি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বিয়ে বাড়ীর হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য শাড়ীর কাজ, ফুলের কাজ, ফুলের গহনা,শাড়ি, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের ফ্রক, স্কাট এর কাজ, এবং মাটির বিভিন্ন জিনিসপত্রের মধ্যে হাতের কাজ করি। এই কাজ করতে গিয়ে আমাকে পাড়ার মানুষের নানান কথা শুনতে হয়েছে। তবে বরাবরই আমার বাবা মা ভাই আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে বাঁধা আসবেই তাই বলে ধমে গেলে বা ভয় পেলে চলবে না। নিজের গতিতে অভিক্ষ লক্ষে পৌঁছাতে কাজ করে যেতে হবে। তবেই সফলতা আসবে বলেন উপমা।
বর্তমানে আমি এই কাজের আয় দিয়ে নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারে ও সহযোগিতা করি। বর্তমানে আমার মাসিক আয় ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। আমি টিউশনি করে পেতাম মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা, আর সেই একই সময়ে আমার আয় এখন ডাবল হয়েছে। আর ঈদ ও পূজা এবং পহেলা বৈশাখের সময় আয় আরো অনেক বেড়ে যায়। তখন গড়ে আমি ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার বা ১লাখের মত অর্ডার পাই। তখন আমার আয় ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার ও হয়ে যায়।
উপমা বলেন, আমি ইউটিউব ভিডিও দেখে এই কাজগুলো প্রথমে শিখি। এরপর চাঁদপুর নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজয়ী থেকে আমার কাজের উপর কয়েকটি প্রশিক্ষণ নেই। বিজয়ীর মাধ্যমে বিভিন্ন মেলায় অংশ নেই এবং সাধারণ মানুষ আমার কাজগুলো খুব পছন্দ করে।
তার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কী এমন প্রশ্নের জবাবে উপমা বলেন, ভবিষ্যতে আমার স্বপ্ন একটি শোরুম করা। সেখানে সকল ধরনের কাজগুলো একত্রে থাকবে, মানুষ দেখবে এবং সেখান থেকে ক্রয় করবে। আমি চাই আমার মত তরুনরা এগিয়ে আসুক এবং সমাজে নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখুক।