শিরোনাম
দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ
কুমিল্লা, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস): দীর্ঘ ১৮ বছর প্রবাস জীবন যাপন করে সাফল্যের মুখ না দেখলেও বরই চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন সুমন।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পূর্ব জোর কানন ইউনিয়নের লামপুর গ্রামের আবু তাহের ও মমতাজ বেগম দম্পতির একমাত্র পুত্র জহিরুল ইসলাম সুমন (৩৮)। দীর্ঘ ১৮ বছর সৌদি আরবে থাকলেও সফলতার ছোঁয়া পাননি। দেশে ফিরে বেকারত্ব নিয়ে হতাশায় ভূগছিলেন। সংসার চালাতে চায়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। এভাবে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় এক আত্মীয়ের পরামর্শ ও সহায়তায় এক বছর আগে একটি জমি লিজ নিয়ে প্রায় এক লাখ টাকা পুঁজিতে সুমন বরই চাষ শুরু করেন। তার এ উদ্যোগকে প্রথমে গ্রামবাসী ভালভাবে না নিলেও এখন তার বাগানের মিষ্টি সুস্বাদু বরই কিনতে প্রতিদিন সরাসরি বাগানে চলে আসেন ক্রেতারা। এমনকি ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতেও হিমশিম খাচ্ছেন সুমন। মানুষের আগ্রহ ও চাহিদা দেখে দারুণ খুশি সুমন ও এলাকাবাসী।
সুমন জানান, সৌদি আরবের যে প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন তা বন্ধ হওয়ার ফলে সেখানে বেশ কিছুদিন বেকার ছিলেন। এরমধ্যে সৌদি আরবের ভিসার মেয়াদও শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ২০১৮ সালে দেশে ফিরে আসেন। সুমনের বাবা আবু তাহের (৭০) একজন চা দোকানী। মা মৃত মমতাজ বেগম। সুমনের এক ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে সাকিবুল ইসলাম সায়মন (১৫) এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়ে নুসরাত জাহান (১০) দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। সবার ছোট ইশরাত জাহানের বয়স ১৮ মাস। আগে বাবার সাথে চায়ের দোকানে কাজ করে সুমন পরিবারের ভরণ-পোষন করতেন। তবে এক বছর ধরে তিনি বরই বাগান করায় সেখানেই বেশি সময় দেন। তবে কাজের ফাঁকে চায়ের দোকানেও সময় দেন।
তিনি বলেন, এবছর বরইয়ের ফলন ভালো হওয়ায় আমি এবং আমার পরিবারের সবাই খুশি।
এলাকাবাসীও সুমনের সাফল্যে খুশি। স্থানীয়রা জানান, বরই চাষে ভাল ফলনে ভাগ্য ফিরতে শুরু করেছে প্রবাস ফেরত জহিরুল ইসলাম সুমনের। প্রবাস থেকে এসে বেকারত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন হতাশায় ভূগছিলেন তিনি। এখন গাছে গাছে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, আপেল কুল জাতের বরই থোকায় থোকায় ঝুলছে। তার সাফল্যে গ্রামবাসীও এখন সুমনকে বেশ সম্মানের চোখে দেখছেন সুমনের এই বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু বরই আর বরই। ছোট গাছগুলো বড় বরই এর ভারে যেন নুইয়ে পড়েছে। এ দৃশ্য ও তরুণ উদ্যোক্তা সুমনের সফলতা দেখে স্থানীয় তরুণ ছাত্র যুবকেরা বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
স্থানীয় লামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ শাহজালাল (৩৩) জানান, সুমন চায়ের দোকানে কাজ করার পাশাপাশি বরই বাগান করে সফল হয়েছেন। এবার তার পরিবারের কষ্ট লাঘব হবে। এই গ্রাম ও এর আশে পাশে বরই বাগান নেই। তাই সুমনের বরই বাগান দেখতে ও বরই কিনতে অনেকেই আসছেন।
লামপুর গ্রামের আরেক বাসিন্দা কবির হোসেন (৩০) একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন। তিনি বলেন, সুমনের বরই চাষে সফলতা দেখে আমিও এ বরই বাগান করতে চাই। কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটি বাগান করে সুমন এলাকাবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
সুমনের বাবা আবু তাহের বলেন, প্রথমে এ এলাকায় বরই চাষ হবে কিনা তা নিয়ে আমি শংকায় ছিলাম। ছেলের এ উদ্যোগকে আমি গ্রহণ করতে পারিনি। এখন দেখলাম সত্যিই বরইয়ের ভাল ফলন হয়েছে। ছেলেও আয়-ইনকাম করতেছে। দেখে ভাল লাগলো। আমিও এখন চায়ের দোকানের পরের সময়টা ছেলের বরই বাগানে ব্যয় করি।
দারিদ্র্যের সাথে দীর্ঘ সংগ্রামের পর সুমন এখন সফল এবং স্বচ্ছল। তিনি বাসসকে বলেন, বিদেশ থেকে আসার পর বেকার জীবনে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। পরে বাধ্য হয়ে চায়ের দোকানে কাজ শুরু করি। এক বছর আগে বরই চাষের উদ্যোগ নেই। এজন্য একজনের কাছ থেকে জায়গাটি ইজারা নেই। বরই চাষের পরপরই এবারের বন্যায় তলিয়ে যায় বাগানটি। এতে আবারও হতাশ হয়ে পড়ি। প্রায় ১৩ দিন পানির নীচে তলিয়ে থাকে বরই গাছ গুলো। পানি নেমে গেলে দেখা যায় ১৪-১৫ টি বরই গাছ নষ্ট হয়েছে। এরপরও বাগানটি পরিচর্যা শুরু করলে বাকী চারা গুলো টিকে যায়। যার ফলে ওই গাছ গুলো থেকে ফলন হচ্ছে।
তিনি জানান, এখন প্রতিদিন গ্রামবাসীর মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বরইয়ের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু তিনি ১৫ থেকে ২০ কেজি বরই গাছ থেকে তুলতে পারেন। ফলে ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। তবে এবার এই বাগান থেকে তিনি ৩ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করেন।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোনায়েদ কবির খান বাসসকে বলেন, সুমনকে আমরা প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত এ বরই গাছ গুলোর ভাল ফলন আসবে। অল্প সময়ে সুমনের সফলতা দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তার এই সফলতা দেখে বরই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন অন্যরাও এ আশাবাদ কৃষি বিভাগের।