শিরোনাম
জাহিদুল খান সৌরভ
শেরপুর, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস): অন্যান্য ফসল চাষের পাশাপাশি শেরপুরে মটরশুঁটি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের। চলতি বছর শেরপুর জেলায় ৬০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটি চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হওয়ায় শেরপুর সদর উপজেলায় মটরশুঁটির বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই চলতি মৌসুমে শুধু সদর উপজেলাতেই ৪০ হেক্টর জমিতে মটরশুঁটির আবাদ হয়েছে। খরচ কম ও ফলন বেশি হওয়ায় আগামী বছর আরো বেশি জমিতে মটরশুঁটি চাষ হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারি-ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখারচর গ্রামের কৃষক মো: আল-আমিন (৪৫) সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় এবছর প্রথম বারের মত ১ বিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষ করেছেন।
তিনি বলছেন, এক বিঘা জমিতে মটরশুঁটি চাষে খরচ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। একই গ্রামের কৃষক মো: সেলিম মিয়া (৪২) জানান, বাড়ির পাশে পতিত ২ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন মটরশুঁটির। তিনি আরো বলেন, চরাঞ্চলের বেশিরভাগ মাটি বেলে দোআঁশ বা দোঁআশ।
এসব জমির পানি ধারন ক্ষমতা কম। তাই সেচ সুবিধা কম প্রয়োজন হওয়ায় চরাঞ্চলে মটরশুটি চাষ লাভজনক।
শেরপুর সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের কাজীরচর গ্রামের কৃষক মজিদ মিয়া (৪৭) বলেন, ডাল জাতীয় ফসল মটরশুঁটি চাষ করলে জমির বিভিন্ন স্তর থেকে গাছ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে সঠিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে। এতে পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, একই জমিতে এক ফসল বারবার চাষ করলে জমির উর্বরতা হারিয়ে ফসল উৎপাদন কম হয়। এতে একদিকে যেমন ফসলের ফলন কমে অন্যদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের নতুন নতুন ফসল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। দেবগিরি ৩৩০৭ জাতের মটরশুঁটির বীজ সাধারণত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করা হয়। ফসলে ফুল না আসা পর্যন্ত মাত্র ৩ বার সেচ দিতে হয়। এছাড়া মটরশুঁটি চাষে রোগবালাই কম হয় বলে কীটনাশকের প্রয়োজন নেই ।
বীজ রোপণের ৮০ থেকে ৯০ দিন পর ফসল ঘরে তোলা যায় এবং বিক্রি উপযোগী হয়। এই জাতের মটরশুঁটির বিঘা প্রতি গড় ফলন ৪০ থেকে ৫০ মণ এবং বাজারে প্রতি মণ মটরশুঁটি বিক্রি হয় ২ হাজার ৮শ থেকে ৩ হাজার টাকায়।
জেলা সদরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ আনোয়ার বলেন, ‘মটরশুঁটি চাষে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ আমরা কৃষি বিভাগ হতে দিয়ে যাচ্ছি। আগামীতে টমেটো, সরিষা, ভুট্টার পাশাপাশি অল্প দিনের ফসল হিসেবে মটরশুঁটি চাষ ব্যাপক আকারে করার জন্য কৃষকরা প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাখাওয়াত হোসেন বাসস'কে বলেন, ‘আমরা কৃষকদের এই সম্ভাবনাময় ফসলটি চাষে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছি। এছাড়া চরাঞ্চলের একটি প্রকল্প রয়েছে, যার মাধ্যমে আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।