শিরোনাম
\ শুভব্রত দত্ত \
বরিশাল, ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : কৃষি অনুপযোগী জমিতে মাছ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মো: শাহরিয়া। কোন প্রকার ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য বা হরমোন ব্যবহার না করেই সবজি ও মাছ চাষে সফল তিনি।
সরোজমিনে দেখা যায়, জেলার সদর উপজেলার রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা শামসের হাওলাদার ও মোসাম্মৎ শাহনাজ পারভিন দম্পতির পুত্র মোঃ শাহরিয়া (২৫)। তিনি ২০২২ সালে বরিশাল পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে পাশ করেন। তিনি ২০২৩ সালে নিজস্ব প্রায় ৪০ শতক অনুর্বর জমিতে বাধঁ নির্মাণ করে একটি মৎস্য চাষ উপযোগী ঘের তৈরী করেন। এছাড়াও প্রায় ২০ শতক জমির উপর সবজি আবাদ করেন। সর্বমোট প্রায় ৬০ শতক জমিতে মোঃ শাহরিয়া এই প্রকল্পটি চালু করেন।
প্রথমেই সফলতার মুখ দেখলেও আরো উন্নতির লক্ষ্যে ২০২৪ সালের শুরুতে বরিশাল জেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে মৎস্য চাষের উপর একটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে জেলা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে একটি ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাছ চাষের প্রসার ঘটান। পাশাপাশি তিনি ঘেরের চার পাশে মৌসুমী বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি আবাদ করেন। চাষাবাদ প্রকল্পটি নিজেই আরো চার জন শ্রমিক নিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করেন।
আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রমের ফলে মোঃ শাহরিয়া আজ একজন সফল উদ্যোক্তা। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে স্থানীয়ভাবে তিনি ব্যপক জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন।
বাসসের সাথে আলাপকালে শাহরিয়া জানান, মাছ চাষে কোন প্রকার ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য এবং সবজি চাষে হরমোন ব্যবহার করা হয়না। তাই মাছ ও সবজি দুটোই স্বাস্থ্যকর। মৎষ্য চাষি শাহরিয়া নিজস্ব প্রায় ৪০ শতক অনুর্বর জমিতে মাটি দিয়ে বাধঁ নির্মাণ করে প্রায় ৫ ফুট পানির উচ্চতা তৈরী করে নিয়েছেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রেনেজ পাম্পের মাধ্যমে পুকুরের তলদেশের বর্জ্য পদার্থ কমানো হয়। মাছের প্রজাতি অনুসারে কখন কী পরিমাণ খাবার প্রয়োজন সে বিষয়ে তথ্য নিয়ে খাদ্য প্রয়োগ করা হয়।
তিনি আরো জানান, এই পদ্ধতিতে ঘেরের তলানিতে বিশেষ স্থান রাখা হয়, এটাকে বলা যায় মাছের টয়লেট।
সেখানে যুক্ত করা হয় পাম্প। পাম্পের দ্বারা তলানিতে জমা বর্জ্য প্রতিনিয়ত অপসারণ করে পানি দূষণমুক্ত রাখা হয়। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন পায় চাষাবাদকৃত মাছ। এতে মাছও সুস্থ জীবনের অনুকূল পরিবেশ পেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠে। পাম্প দিয়ে পানি পরিস্কার করায় স্রোত ও প্রবাহের কারণে মাছের রং ও স্বাদ হয় নদীর মাছের মতোই। এতে ৬ মাসের মধ্যে প্রতিটি মাছের গড় ওজন দাঁড়ায় প্রায় ১ হাজার ২৫০ গ্রাম।
শাহরিয়া বলেন, এই ঘেরে বর্তমানে আমি মিশ্র মাছের চাষ করি। প্রাথমিকভাবে কাচঁ (কার্প) জাতীয় মাছের চাষ বেশি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে তেলাপিয়া, শিং, কই, শলাচিংড়ি ইত্যাদি। পাশাপাশি, ঘেরের চারপাশে ও প্রায় ২০ শতক জমি রয়েছে সবজি চাষের জন্য। সবজি চাষে নিজের তৈরী জৈব সার ব্যবহার করি। অধিক শীতে এমনকি শৈত্যপ্রবাহে পলিথিন দিয়ে ঢেকে এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে চারাগুলো সুস্থ রাখার চেষ্টা করি।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রিন্স বাহাউদ্দিন তালুকদার বাসস’কে বলেন, জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর মৎস্য ও মৎস্যজাত উৎস হতে প্রাণিজ পুষ্টির চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও বেকার যুবকদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে কাংক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
বরিশাল প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীন সাংবাদিক ও অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম খসরু বর্তমান সময়ের তরুণদের উৎসাহী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বরিশাল জেলার নিম্ন ও অনুর্বর জমিতে সবজি ও মাছ চাষের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তরুণরা চাইলে এই খাত থেকে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে।
জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক মো: শামিম চৌধুরী বাসস’কে বলেন, কোন প্রকার ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য বা হরমোন ব্যবহার না করে সবজি ও মাছ চাষের বিপুল এই সম্ভাবনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক আরো বলেন, মাছ চাষের মাধ্যমে যুবকরা নিজে যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবেন, তেমনি নিজ নিজ এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করতে পারেন।