বাসস
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২০:৪২
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪১

ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সব দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

ঝিনাইদহের একটি মিলনায়তনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এক কর্মশালায় বক্তব্য রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা রুখতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়েছেন। 

আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির উদ্যোগে ঝিনাইদহ, যশোর ও নড়াইল জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের জন্য ‘রাষ্ট্র্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এক কর্মশালায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান তারেক রহমান। তাঁর এই বক্তব্য একযোগে উল্লেখিত তিন জেলায় প্রচার করা হয়। এ ছাড়াও তিনি ৩১ দফা সম্পর্কিত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।  

তারেক রহমান বলেন, ‘বিএনপির ৩১ দফা দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য। এর মাধ্যমে আমরা দেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। এই প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই বিএনপি কাজ করে যাচ্ছে। তবে এ জন্য জনগণকে আস্থায় নিতে হবে। নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ভাবনায় রাখতে হবে কেবলই জনগণ, জনগণ এবং জনগণ।’ 

তিনি বলেন, ‘৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সকল জুলুম নির্যাতনের প্রতিশোধ নেব। আমি প্রতিবারই বলছি সামনের চলার পথ মোটেও মসৃণ নয়। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ সকল ষড়যন্ত্র মোবাবেলা করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করা যাবে না। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনে দলের নেতাকর্মীদের এক থাকতে হবে। দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’ 

এ কর্মশালায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন পেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন,‘৭১ সালে যুদ্ধের সময় কোন দল বর্ডার টপকে ভারতে আমোদ প্রমোদ করে কাটিয়েছেন। আবার কোন দল স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতা করেছেন। কিন্তু বিএনপি এমন একটি দল যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে দেশ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, দেশ প্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করাও এই ইমানের মধ্যে পড়ে।’

আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় আছি। পুরো জাতি নির্বাচনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। জনগণ বিএনপিকে ভোটদানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। তবে আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে হলে বিএনপির সকল নেতাকর্মীর জন্য জনগণের আস্থা অর্জনের বিকল্প নেই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের জনগণের সঙ্গে থাকতে হবে, তাদের পাশে রাখতে হবে।’ 

বিএনপি একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল এ কথা উল্লেখ করে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘এই দলের প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাক দিয়ে নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। আবার দেশ পরিচালনায়ও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করে কীভাবে দেশ গঠন ও পরিচালনা করতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছেন। তাই দেশের প্রতিটি কমবেশি নিরপেক্ষ নির্বাচনে বিএনপিকে মানুষ ভোট দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। এটি বিএনপির সবচেয়ে বড় অর্জন।’

তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ১৬ বছরে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা খুন, গুম, হামলা- মামলার শিকার হয়েছেন। দেশ ও দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাকর্মীরা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জনগণের একটি বিশাল অংশ বিশ্বাস করে, আগামীতে দেশের যদি ভালো কিছু হয়, সেটা বিএনপির দ্বারাই হবে। স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশ গঠনে নিজেই মাঠে ঘাটে হেঁটে হেঁটে কাজ করেছেন। আমরা শহিদ জিয়ার সেই নীতি নিয়ে কাজ করতে চাই।’ 

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহিদ ও গত ১৬ বছর গুম খুনের শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের উদ্দেশ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের ভোটে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে, যারা আন্দোলন সংগ্রামে শহিদ হয়েছেন তাদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে। সঠিক তালিকা করে শহিদ ও আহতদের খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। শহিদদের স্মরণে নিজ নিজ এলাকার সরকারি স্থাপনার নামকরণ করা হবে। আন্দোলনে অংশ নেওয়া বেকার যুবকদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে বেকার ভাতাসহ অন্যান্য খাতে ভাতা ব্যবস্থা চালু করা হবে। 

তারেক রহমান বলেন, ‘পলাতক স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের প্রশ্রয়ে কিছু মানুষ ঋণের নামে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। এ সরকার ব্যাংকগুলোকে আইন ও ব্যাংকিং নীতির আলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ করছে। এখানে বড় চ্যালেঞ্জ, জনগণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জন করা। আমরা বিশ্বাস করি, ব্যাংকিং খাতে আস্থা ফেরাতে সরকার কাজ করবে।’ 

তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে লন্ডনে একটি অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, ৫ শতাংশের বেশি কোটা থাকা উচিত নয়। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার কোটা প্রথার লাগামহীন ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয় লোকজন নিয়োগ দেয়। তবে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলে কোটা নয়, মেধার মূল্যায়ন করবে।’ 

বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজনে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মুন্সি কামাল আজাদ পান্নুর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, ঢাবি সাদা দলের আহ্বায়ক ড. মোরশেদ হাসান খান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো হেলাল উদ্দিন, মো. আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।