শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন অনলাইন ব্যবসায়ী কওমি উদ্যোক্তাদের সততার সাথে ব্যবসা করার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ব্যবসায় ভেজালমুক্ত পণ্য সরবরাহ করতে হবে।
তিনি বলেন, ধর্মকে ব্যবহার করে অতীতে অনেকে ব্যবসার নামে প্রতারণা করেছে। ইসলামি লেবাস পড়ে ব্যবসার নামে দেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
আজ রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনলাইন ব্যবসায়ী কওমি উদ্যোক্তা আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, অতীতে ইসলামি ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠা করে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। তাদের প্রতারণার কারণে অনেকে অর্থ হারিয়েছে। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পরে ইসলামি লেবাসধারী অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও করেছেন। তাদের প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে অনেকে সব হারিয়েছেন।
কওমি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আলেম-ওলামারা ব্যবসায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন ফলে কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে আলেম-ওলামারা সাবলম্বী হচ্ছেন। এটি অসাধারণ উদ্যোগ, তবে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার বিষয়ে ট্রেনিং নেওয়া প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, আলেমরা উদ্যোক্তা হলে দেশের চেহারা পাল্টে যাবে। জাতির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। রাষ্ট্রে সমৃদ্ধি আসবে। উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াস আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে আলেমদের এরূপ উদ্যোগ আরো বেশি প্রশংসনীয়। তাদের মধ্যে যেহেতু আল্লাহ ভীতি আছে সেকারণে তারা ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনরূপ অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করবেন না। তারা পণ্যে ভেজাল দেবেন না। তারা ওজনে কম দেবেন না, পরিমাণে কম দেবেন না। এর ফলে বাজারে বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য ও খাঁটি পণ্য পাওয়া যাবে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ। উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। অনুকূল পরিবেশ ছাড়া উদ্যোক্তা তৈরি হয় না। উদ্যোক্তা তৈরির জন্য সরকারি ও বেসরকারি প্রয়াস নিতে হবে।
উদ্যোক্তা তৈরির সুবিধাসমূহ তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, কোন উদ্যোক্তা সফল হলে প্রথমত ব্যক্তির লাভ। এরপরে সমষ্টিগত লাভ, সমাজ ও দেশের লাভ। উদ্যোক্তা তৈরি হলে মানুষের অলস অর্থ বিনিয়োগ হয়। এর ফলে বাজারে তারল্যসংকট দূরীভূত হয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এছাড়া, প্রতিযোগিতামূলক বাজার গড়ে উঠে, বাজারে গুণগতমানের পণ্যের সমাহার ঘটে।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, বৈধ অর্থ আয়ের যে ১০টি পথ আছে তার ৯টিই হলো ব্যবসা। টাকা আয় করতে হবে বৈধ পথে। যেনতেনভাবে টাকা আয়ের চিন্তা-ভাবনা পরিহার করতে হবে।
টাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে ড. খালিদ বলেন, টাকা থাকা ভালো। আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে হজ ও যাকাতের মতো ফরজ ইবাদত সম্পাদন করা যায়। আর্থিক দীনতা মানুষের স্বভাব নষ্ট করে দেয় এবং মানুষ অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে আর্থিক স্বচ্ছলতা অর্জনে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে।
কওমি উদ্যোক্তার চেয়ারম্যান রোকন রাইয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কওমি উদ্যোক্তার মডারেটর লোকমান গাজী।
অনুষ্ঠানে রহিম আফরোজ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ রহিম, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ, আইএফএ কনসালটেন্সির সহপ্রতিষ্ঠাতা ড. মুফতি ইউসুফ সুলতান, কওমি উদ্যোক্তার সহপ্রতিষ্ঠাতা মুমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য প্রদান করেন।
কওমি উদ্যোক্তারা অনলাইনের মাধ্যমে ঘি, মধু, সরিষার তৈল, পোশাকসহ নিত্যপ্রয়োজনীও পণ্য বিক্রি করছেন। কওমি মাদ্রাসার ছাত্র এবং শিক্ষকরা এ উদ্যোগের সাথে জড়িত।
অনলাইন টেক একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় দিনব্যাপী এ সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কওমি ঘরনার দুই সহস্রাধিক আলেম উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।