বাসস
  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৫

ভুট্টা  চাষ করে স্বপ্ন বুনছেন লালমনিরহাটের কৃষকরা

: অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভের আশায় এবছরও ভুট্টা চাষে স্বপ্ন বুনছেন লালমনিরহাটের ভুট্টা চাষিরা। ছবি ; বাসস

বিপুল ইসলাম

লালমনিরহাট, ১ ফেব্রুয়ারি , ২০২৫(বাসস) : অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভের আশায় এবছরও ভুট্টা চাষে স্বপ্ন বুনছেন জেলার ভুট্টা চাষিরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছরও ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন তারা। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার ৫ উপজেলাসহ তিস্তার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।  

কম খরচে বেশি উৎপাদন হওয়ায় চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গায় দিন দিন ভুট্টার আবাদ বেড়ে চলেছে। পরিত্যাক্ত জমিগুলোও এখন আবাদী হয়ে উঠেছে । একসময় জেলার চর অঞ্চলের জমিগুলোতে তেমন কোনো ফসল ফলতো না। শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। এসব জমিজুড়ে জন্ম নিতো আগাছা। এখন সেসব জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে।

গবাদিপশুর খাদ্য তৈরিতে ভুট্টার ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সারাবছর এর চাহিদা থাকে। অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে খরচ কম, লাভজনক , ঝুঁকিহীন, কম পরিশ্রমে বেশি ফসল, অল্প সেচ ও সার প্রয়োগের সুবিধা থাকায় কৃষকেরা এ ফসল চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। 

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ভুট্টা আবাদের সময় বীজ বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রথমে সেচ প্রয়োগ ও আগাছা দমন,  ৫০-৫৫ দিন পর ২য় বার এবং ৭০-৭৫দিন পরে ৩য় বার হালকা সেচ প্রয়োগ করলে বাম্পার ফলন পাওয়া যায়। রোগ বালাই, পোকা মাকড়ের আক্রমণ খুবই কম হয় ভুট্টাতে। ফলে জেলার কৃষকরা দিন দিন ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

এবছর ২ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন তিস্তা  চরের কৃষক আনারুল হক আলমগীর (৫২)। বাসসের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ তুলনামূলক কম। এছাড়া ভুট্টা গাছের কোনকিছুই ফেলানো যায় না। এর পাতা গরুকে খাওয়ানো যায় এবং ডাটা ও মোচা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাজারে চাহিদা ও দামও ভালো । তাই এ বছর ২ একর জমিতে ভুট্টা আবাদ করেছি। যদি আশানুরূপ ফলন ও দাম পাই তাহলে আগামী বছর আরো বেশি জমিতে ভুট্টার চাষ করবো।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক সেলিম ইসলাম (৪০) জানান, তিনি এবার এক একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। 
তার বিঘা প্রতি (৩৩ শতাংশ) জমিতে ভুট্টা উৎপাদন করতে মোট খরচ হবে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। 

আবার সেই জমিতে ভুট্টার ফলন ভালো হলে তিনি প্রতি বিঘায় ৩২থেকে ৩৬ মন ভুট্টা পাবেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা প্রায় সাড়ে ১১’শ টাকা থেকে ১২’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ১ বিঘা জমিতে ভুট্টা উৎপাদন করে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ করা যায়।

ভুট্টাচাষে সেচের চাহিদা কম হওয়ায় কৃষকদের কাছে  এই ফসল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বড়বাড়ী ইউনিয়নের কৃষক আনারুল হক (৫০) বাসস'কে বলেন, ভুট্টা চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতিবারের মতো এবারও দেড় বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। 

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা  খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বাসস'কে বলেন, সব ধরনের ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল ও তামাকের বিকল্প ফসল হওয়ায় আমরা তামাক চাষকারী কৃষক ভাইদের ভুট্টা আবাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাছাড়া কম সময়ে  বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এ জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা প্রদানে কাজ করছি। আশা করি এ বছর আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে কোনো দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন বাসস'কে জানান, এবছর জেলার ৩৩ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকেও প্রণোদনাসহ সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষকরা যেন সহজে কৃষি উপকরণ পায়। বিশেষ করে বীজ, সার ও তেলের জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি।