বাসস
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:০৩

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ জেআরসি’র

বুধবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নঈম মমিনুর রহমান। ছবি : পিআইডি

ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন (জেআরসি) রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে কোনো অনুরোধ না পেলেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করার এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে।

আজ বুধবার বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে এই প্রস্তাব করা হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নঈম মমিনুর রহমানের নেতৃত্বে জেআরসি সদস্যরা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর করেন।

কমিশন সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ এবং আপিল বিভাগে জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির সিদ্ধান্তকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শও দিয়েছে।

২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর সর্বোচ্চ আদালত সংবিধানের ষষ্ঠদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় আপিল বিভাগের একটি রায় পর্যালোচনার আবেদন নিষ্পত্তি করে অক্ষমতা বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাসম্পন্ন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনর্বহাল করে। 

রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বর্তমান ও সাবেক বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য প্রক্রিয়া ছাড়া অপসারণ করা যাবে না এমন পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক একটি আচরণবিধি তৈরি ও পরবর্তীকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশের প্রস্তাবও করা হয়েছিল।

জেআরসি সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের সর্বাধিক স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগের জন্য প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে নয় সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ কমিশন’ গঠনে একটি আইন প্রণয়নেরও প্রস্তাব করেছে।

জেআরসি নির্বাহী কর্তৃত্বের অবসান ঘটিয়ে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ এবং পাশাপাশি জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রাসঙ্গিক নিয়ম সংশোধনেরও প্রস্তাব করেছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ২৭ অক্টোবর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে একটি প্রস্তাব পাঠান।

সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সেদিন জানায়, প্রধান বিচারপতি এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে দেশের সকল বিচারক, আইনজীবী ও বিচারিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন।

প্রধান বিচারপতি রেফাত আহমেদ তার ভাষণে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য সুপ্রিম কোর্টের অধীনে জরুরি ভিত্তিতে একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, এটি হবে বিচার বিভাগ সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ।

প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার পর বিচার বিভাগে গুণগত পরিবর্তন আনার অন্যতম কাজ হবে ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের বাইরে গিয়ে যোগ্যতা, সততা ও দক্ষতার ভিত্তিতে বিচারক নিয়োগ নিশ্চিত করা।