শিরোনাম
ঢাকা, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতাসহ নাগরিক দুর্ভোগ লাঘব করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সাপোর্ট চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গত তিনদিন ঢাকায় অবস্থান করে প্রধান উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাসহ প্রায় প্রত্যেকেই চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
মেয়র জানান, আসন্ন বর্ষা মওসুমের আগে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রয়োজনীয় খাল খনন, নালা নর্দমা পরিষ্কারসহ প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজের জন্য প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ শতাংশ মাশুল আদায়সহ অন্যান্য প্রকল্প নিয়েও প্রধান উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছি।’
সিটি মেয়র শাহাদাত জানান, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রায় ঘন্টাব্যাপী চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন। তিনি সব খোঁজখবর রাখেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
মেয়র জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পুরোটা সময় ছিল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। ফলে চট্টগ্রামের উন্নয়নসহ অনেক বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা ও হৃদ্ধতাপূর্ণ আলোচনায় আমি (মেয়র) বিমোহিত।’
তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের যে কাজ চলছে, তার সুফল তোমার হাত দিয়ে পুর্ণতা পেতে হবে। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। আমিও মেয়র হিসেবে প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছি, ইনশাআল্লাহ চট্টগ্রামবাসীর কষ্ট লাঘব করে প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতার মুল্য দেব।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্বাবধানে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল কোরের সহযোগিতায় জলাবদ্ধতা নিরসনের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
ডা. শাহাদাত বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছি চট্টগ্রাম বন্দরের আয়ের ১ শতাংশ মাশুল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের পাওয়া উচিত। প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি মনোযোগ সহকারে শুনেছেন এবং ‘যৌক্তিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। আশা করছি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় যৌথ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পরদিন গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন যান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার দফতরে।
সিটি মেয়র জানান, আলোচনায় চট্টগ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক উপদেষ্টা।
গতকাল বুধবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে সিটি মেয়র সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে এ কথা বলেন উপদেষ্টা। তিনি চট্টগ্রামে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং সম্ভাব্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
এসময় মেয়র জলাবদ্ধতা নিরসনে চসিকের প্রস্তাবিত ২৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানে উপদেষ্টার সহযোগিতা চান।
মেয়র উপদেষ্টাকে জানান, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিন ধরে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রূপ নেয়। এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়বে। সিটি কর্পোরেশন আশা করছে, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করা সম্ভব হবে।
ডা. শাহাদাত হোসেন উপদেষ্টাকে জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা বাস্তবায়নে ২৯৮ কোটি টাকা প্রয়োজন। কারণ, নালা-খাল পরিষ্কার করতে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মাটি -বর্জ্য উত্তোলন ও অপসারণের গাড়ি প্রয়োজন।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা সমস্যা দীর্ঘদিনের, যা নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে অতি দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
এসময় জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা হয়। মেয়র জানান, শহরের বিভিন্ন খাল পুনঃখনন ও সংস্কার, নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ, বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য আধুনিক পাম্প স্টেশন স্থাপন এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করা প্রয়োজন। নগরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
উপদেষ্টাকে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা শুধু বর্ষাকালের সমস্যা নয়, এটি একটি সারা বছরের দুর্ভোগ।
জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আমরা একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি, যার জন্য পর্যাপ্ত বাজেট ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। চট্টগ্রাম শহরের ৭০ লাখ বাসিন্দার দুর্ভোগ লাঘব করতে নগরসেবক হিসেবে কাজ করতে চাই।
শাহাদাত বলেন, ‘জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান করে চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
বর্তমান সময়ে আমাদের উন্নয়নের পথে বড় বাধা হলো সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। আমি চাই, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা একসঙ্গে কাজ করুক, যাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুত ও কার্যকরভাবে হয়। এক্ষেত্রে চট্টগ্রামের সবগুলো সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থা প্রতিবছর একটি সমন্বিত কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত সাফল্য আসবে।’