শিরোনাম
ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : কথাসাহিত্যিক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা’র (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহযোগীরা ফিরে আশার চেষ্টা করলে দেশ বড় ধরনের সংকটে পড়বে। কারণ ছাত্র-জনতা তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যেতে দেবে না।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা কি পরিবর্তনের জন্য প্রাণ দিয়েছিল সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে, তা না হলে বড় ভুল হয়ে যাবে। জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আত্মত্যাগ কোনো ভাবেই যেন বৃথা না যায় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।
আজ শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটর আঞ্চলিক লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাংস্কৃতিক আন্দোলন আয়োজিত গণঅভ্যুত্থানের কন্ঠস্বর ৩৬ জুলাইয়ের কবিতা পাঠ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী নজরুল ইসলামের‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। কবিতাটি আবৃত্তি করেন ইকবাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।
এতে বক্তব্য দেন কলামিস্ট ইঞ্জিনিয়ার একেএম রেজাউল করিম, কথাসাহিত্যিক ও দৈনিক সমকালের সহকারী সম্পাদক এহসান মাহমুদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পক্ষে স্বাগত বক্তব্য দেন সানাউল্লাহ সাগর।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিষয়ক ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরিদ আহমেদ রনি’র জুলাইয়ের শহিদদের নিয়ে বই ‘আত্ম নিবেদন’। গণঅভ্যুত্থান কেন্দ্রিক কবিতা নিয়ে পলিয়ার ওয়াহিদের ‘গুলি ও গাদ্দার’। জুলাই যোদ্ধা কাদের মাজহারের ‘কারাগারের স্মৃতিকথা’। জিএম রাজিব হোসেনের ‘দ্রোহের গ্রাফিতি’। এনামূল হক পলাশের ‘পলায়নের আগে’। এ ছাড়া রয়েছে ফেরদৌস মাহমুদ ও নকিব মুকশির কাব্যগ্রন্থ।
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, আওয়ামী লীগের ন্যারেটিভ এবং ইন্ডিয়ান হেজিমনির ন্যারেটিভকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তা না হলে জুলাই বিপ্লব সফল হবে না।
তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর ধরে স্বৈরাচার কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিস্ট শাসক আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল সিন্দাবাদের সেই ভূতের মতো। সেই শাসক তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য সমস্ত পথ তৈরি করে রেখেছিল। তাকে হটাতে গিয়ে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেগুলো নানা কারণে সফল হয়নি। সর্বশেষ জুলাই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছে। কারণ দেশের সর্বস্তরের মানুষ বিশ্বাস করেছিল ছাত্ররা নিজেদের জীবন দিয়ে স্বৈরাচার সরকারকে হটাতে চায়।
তিনি আরও বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে সকলের অবদান আছে। তা না হলে এতো বড় ঘটনা ঘটে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৬৯-১৯৯০সহ গত ১৫ বছর বড় বড় আন্দোলন হয়েছিল কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এতো অল্প সময়ের আন্দোলনে এত বেশি মানুষ অতীতে আহত এবং নিহত হয়নি। আসলে এই আন্দোলনে মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিয়েছিল।
তিনি বলেন, গত তিন-চার দিনে দেশে এক ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সম্প্রতি ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছিল, বিশেষ করে ভারতীয় বিভিন্ন মিডিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ মিথ্যা প্রচারণা চালায়। ভারতীয় মিডিয়া বর্তমান সরকারকে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে সরে যেতে হবে বলে বয়ান তৈরি করে এবং তা বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
প্রচার করা হয় বর্তমান সরকার নেই, উপদেষ্টারা পালিয়ে গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এছাড়া শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন বলে প্রচার করা হয়। বই মেলায় ডাস্টবিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে আওয়ামী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়েছিল এবং তারা এটিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। এ সব বিষয়ে ছাত্র-জনতাসহ সাধারণ মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়ে কারণ তারা চায় জুলাইয়ের আত্মত্যাগ কোনো ভাবেই যেন বৃথা না যায়। এসব আশঙ্কা থেকে ছাত্র-জনতার মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের আত্নত্যাগ থেকে সরে যাওয়া খুবই কঠিন হবে। কবিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, কবিতার মাধ্যমে স্পষ্ট কথা বলার ধারা সৃষ্টি হয়। সংকট মোকাবেলায় কবি,সাহিত্যিক প্রত্যেকেই নিজের অবস্থান থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।
প্রথম পর্বে কবিতা পাঠ করেন চঞ্চল বাশার, ফারুক ওয়াসিফ, জুননু রাইন, ইব্রাহীম নিরব ও শাদমান শাহিদ। তারপর সানাউল্লাহ সাগরের কবিতা আবৃত্তি করেন শিল্পী রাজিয়া সুলতানা ঈশিতা। দ্বিতীয় পর্বে কবিতা পাঠ করেন মাইনুল ইসলাম মানিক, আশিক বিন রহিম, নাহিদা আশরাফি, মামুন আজাদ, রুদ্রাক্ষ রায়হান, রিদওয়ান নোমানী। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছড়া পাঠ করেন আহমেদ ইসহাক এবং নকিব মুকশির কবিতা আবৃত্তি করেন লুৎফর হাসান রুমি।
জুলাই বিপ্লবে কবিতার ভাষা ও গণমুখী কবিতা নিয়ে কথা বলেন কবি ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক শামস আরেফিন। তৃতীয় পর্বে কবিতা পাঠ করেন সীমান্ত হেলাল, মোহাম্মদ জসিম, বহ্নি কুসুম, রাজা আবুল কামাল আজাদ, অর্বাক আদিত্য, মনসুর আজিজ।
এ পর্বে অভ্যুত্থানে গানের ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন গীতিকার মহসিন আহমেদ এবং পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতা আবৃত্তি করেন তরিকুল ফাহিম। গণঅভ্যুত্থানে সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে কথা বলেন কবি নকিব মুকশি।
চতুর্থ পর্বে কবিতা পাঠ করেন মুহিম মাহফুজ, এনামূল হক পলাশ, হাসান মাহাদি, মিসির হাসনাইন, আহমেদ স্বপন মাহমুদ। এ পর্বে খুনি হাসিনার বিচারের দাবিতে ছড়া পাঠ করেন জুলফিকার শাহদাৎ। পঞ্চম পর্বে কবিতা পাঠ করেন মাসুম মুনওয়ার, সাজ্জাদ সাইফ, সুলতান স্যানাল, মুহিবুর রহমান, মুসা আল হাফিজ, হাসান জামিল। এ পর্বে শহিদ ও আহত পরিবারের গল্প বলেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশেষ সেল প্রধান ও লেখক হাসান ইনাম।
ষষ্ঠ পর্বে কবিতা পাঠ করেন এহসান হাবীব, সাঈদ ইসলাম, মহিউদ্দীন মোহাম্মদ, সাখাওয়াত টিপু, ফেরদৌস মাহমুদ। এ পর্বে রাজপথে রুখে দাঁড়ানোর গল্প শোনান নুসরাত নূর।
সপ্তম পর্বে কবিতা পাঠ করেন ঈফতেখার ঈশপ, নজরুল মোহাম্মদ, অর্বাক আদিত্য, মুনীরুল ইসলাম; শহিদ পরিবার নিয়ে কথা বলেন ‘জুলাইয়ের আত্মদান’ বইয়ের লেখক ফরিদ আহমেদ রনি।