শিরোনাম
রংপুর, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বর্তমান সময়ে দেশ ও জাতির প্রয়োজনে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কাঠামোগত কাঠামো তৈরির জন্য গঠনমূলক আলোচনায় রাজনৈতিক অংশীদারদের সম্পৃক্ত করে রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কার শুরু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
রাজনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তত্ত্বাবধানে ‘ঐক্যমত্য পরিষদ’ প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক অংশীদারদের নিয়ে বৃহত্তর প্রচেষ্টা শুরু করার লক্ষ্যে আয়োজিত আজ এক সংলাপে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে।
আজ শনিবার নগরীর হোটেল ক্যাস্পিয়ায়’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন এবং ৩৬ জুলাই ফোরাম-অপরাজেয় বাংলায় ‘সমঝোতা ব্যতিত কি সাংবিধানিক সংস্কার সম্ভব?’ শীর্ষক দিনব্যাপী সংলাপের আয়োজন করে।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের রংপুর জেলা সমন্বয়কারী অধ্যাপক চিনু কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, ছাত্র সমন্বয়ক এবং নেতা, সুশীল সমাজের সদস্য এবং পেশাদাররা অংশগ্রহণ করেন।
সংগঠনের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট রাইহান কবিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রীয় সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম।
সমঝোতা সংলাপ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জুলাই ৩৬ ফোরাম-অপরাজেয় বাংলার আহবায়ক নাজীর শাহীন, রংপুর মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, আমার বাংলাদেশ-এবি পার্টির রংপুর মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ রংপুর জেলা সেক্রেটারি আমিরুজ্জামান পিয়াল, গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান, জেএসডি (জাসদ) রংপুর মহানগর সদস্য-সচিব এবিএম মশিউর রহমান, নাগরিক ঐক্যের রংপুর জেলা আহ্বায়ক মাহি আজাদ, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য ফরিদুল ইসলাম, কনক রহমান, গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য হানিফ খান সজিব, জেলা কমিটির সংগঠক আশিকুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ প্রমুখ।
অধ্যাপক চিনু কবির তার স্বাগত ভাষণে বলেন, ২৪-এর জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতি দেশে গনতন্ত্রকে প্রাতষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনার সুযোগ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক সংকটময় পর্যায়ে রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত ‘ঐক্যমত্য পরিষদ’ গঠনের জন্য কিছু ছাড় দিয়ে ঐক্যমতে আসা। অন্যথায়, সমস্যাগুলো আরো ঘনীভূত হতে পারে, যা জাতিকে আরো গভীর সংকটে ফেলতে পারে।’
রাষ্ট্রীয় সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া ও প্রচার সমন্বয়কারী সৈয়দ হাসিবুদ্দিন হোসেন তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বলেন, জুলাইয়ের বিদ্রোহের পর থেকে সাংবিধানিক সংস্কারের দাবি উঠে এসেছে।
তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য অপেক্ষা না করে সাংবিধানিক সংস্কার শুরু করার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
সাংবিধানিক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ থেকে ন্যূনতম ঐক্য অর্জন করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে কঠিন হবে।
তিনি প্রস্তাব করেন যে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্য পরিষদ গঠনের জন্য একত্রিত হয়ে সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করা এবং সংলাপ, আলোচনা এবং ছাড় প্রদানের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনগুলো ধৈর্যের সাথে বাস্তবাযয়ন করা উচিত।
উপরন্তু, তিনি পরামর্শ দেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঐক্য কমিশনকে সংস্কার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঐক্যমত্য কাউন্সিল গঠনের প্রক্রিয়াটি সহজতর করার জন্য একটি সচিবালয় হিসেবে কাজ করা উচিত।
হাসনাত কাইয়ূম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অপেক্ষায় না থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংবিধান সংস্কারে ‘সমঝোতা পরিষদ’ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
তিনি বলেন, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে নিস্ক্রিয় থাকার উপায় নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজ উদ্যোগে সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেয়ার ঐতিহাসিক দায়িত্ব রয়েছে। সংবিধান সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনীয় আলাপ আজকে আমরা শহিদ আবু সাঈদের রংপুর থেকে শুরু করলাম। ক্রমাগত নানা অংশীজনদের সাথে দেশব্যাপী সমঝোতার আলাপ তুলে ধরে সংবিধান সংস্কারের টেকসই ও বাস্তবমুখী পথ নির্ধারণ করতে পারবো।
বিএনপির রংপুর মহানগর আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, রাজনৈতিক মহলে সংস্কার নিয়ে ঐক্য করতে হবে। সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে সমঝোতা পরিষদ তৈরির প্রস্তাবে বিএনপির নৈতিক সম্মতি রয়েছে। কিন্তু সংস্কার প্রশ্নে সিদ্ধান্ত হবে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতেই। বিএনপির ৩১ দফার ভিত্তিতে সংস্কারের কাজ করা যেতে পারে বলে আমরা বলেছি।
এবি পার্টির রংপুর মহানগর শাখার আহবায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুর রউফ বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে সংস্কার করে তারপর নির্বাচন করতে হবে। সমঝোতায় আসতে ছোট বড় সকল শক্তির ক্ষমতার ভারসাম্য আলোচনার প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে।
গণসংহতি আন্দোলন রংপুর জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান বলেন, জাতির জীবনে ঐতিহাসিক মুহূর্ত বার বার আসে না। অতীত ইতিহাস থেকে দলগুলোকে শিক্ষা নিতে হবে এবং জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে একটা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত সৃষ্টি করতে হবে।
এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রংপুর মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু, জুলাই বিপ্লবে শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র মা সামসি আরা জামান কলি, রংপুর আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, অ্যডভোকেট মুনির চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর নাসিমা আমিন, জেলা দর্জি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, মোবাইল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।