বাসস
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৪
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:১১

গণহত্যার সঠিক বিচার না হলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে : রিজভী

শনিবার দলের কার্যালয়ে বক্তব্য দেন রুহুল কবির রিজভী। ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা, ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জুলাই বিপ্লবে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার সঠিক বিচার না হলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

আজ শনিবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্থূানে বিএনপি’র সহস্রাধিক মানুষ হত্যা, হাজার হাজার পঙ্গু ও আহত হওয়ার এই বর্বরোচিত ঘটনা ও আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই গণহত্যার বিচার হতে হবে।

শুধুমাত্র আসামিদের গ্রেপ্তার, জেলে ও দেশের বাইরে রেখে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নয় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, সচিবালয়ে গিজগিজ করছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রেতাত্মারা। পুলিশ-প্রশাসন-আদালতে তারাই সবকিছু করছে। অবিলম্বে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে আবারো হাসিনার দোসরদের পরাস্ত করা কঠিন হবে ।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা এখন প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে রয়েছে। যারা ৫ আগস্টের পরিবর্তনকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি এমন লোকদেরকে চিহ্নিত করতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে সফল হওয়া কঠিন।

রিজভী বলপন,বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সকল পদক্ষেপ সবার কাছে সাফল্য হিসেবে বিবেচিত নাও হতে পারে কিন্তু এই সরকারের ব্যর্থতা গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির ব্যর্থতা হিসেবেই পরিগণিত হবে। এ কারণে বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়। তবে সরকার নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা এটিও ভেবে দেখার প্রয়োজন রিয়েছে। সরকারের ‘কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপে’ কম গুরুত্তপূর্ণ ইস্যু বাদ দিয়ে জনগণের নিত্যদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদের জননী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে এবং ষড়যন্ত্রমূলক অডিও রেকর্ড প্রকাশের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক উস্কানি দিচ্ছে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উস্কানিতে ইতিমধ্যে গণহত্যাকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সারাদেশে গুপ্ত হামলা, ঝটিকা মিছিল ও গণসংযোগ শুরু করেছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে রক্তপিপাসু আওয়ামী দুর্বৃত্তরা গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর নারকীয় আক্রমণ চালিয়েছে।

পতিত সরকারের গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর ফ্যাসিস্টদের নিয়ে ভার্চুয়ালি মিটিং করে বলেছেন, ‘যে শহরে আমরা দিনের বেলা ঘুরতে পারি না সে শহরের কাউকে আমরা ঘুমাতে দিবো না’।

রিজভীর দাবি, আওয়ামী লীগের নয়া প্রোজেক্টের মাস্টারপ্ল্যানারদের একজন গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর। অথচ এমন ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীকে এখনো গ্রেফতার করতে পারছে না। এটা সরকারের চরম ব্যর্থতা।

রিজভী বলেন, দুর্নীতির মাফিয়া চক্রের অন্যতম শিখন্ডি পলাতক সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল কনফারেন্সে ষড়যন্ত্রমূলক সভা করে তিনি বলেছেন, পুলিশের ও প্রশাসনের ৯০ ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং তাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে প্ল্যান করা হচ্ছে।

বিএনপি নেতা বলেন, এসব ঘটনায়ই বোঝা যায়, নজিরবিহীন দুর্নীতির মহানায়ক সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদরা। বেনজির আহমেদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গোপনীয় ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের খবর প্রকাশ্যে আসার পরও প্রশাসন নির্বিকার।

রিজভী বলেন, বেনজির আহমেদের সাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের ভার্চুয়াল কনফারেন্সে যারা জড়িত তারা আইনের আওতার মধ্যে পড়ে। ইতোমধ্যে হাসিনার নির্দেশে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। পুলিশের গাড়ি থেকে পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল ওহাবকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণহত্যাকারী আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও বিচারের বিষয়ে যতোটা কঠোর হওয়া দরকার ছিল, উল্টো বিপরীত চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।