শিরোনাম
নাটোর, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার প্রকৃতি জুড়ে বসন্তের হিরন্ময় উপস্থিতি। গাছে গাছে রঙ ছড়াচ্ছে পলাশ। পাতা হারিয়ে কালো কুঁড়িতে আচ্ছাদিত শিমুল গাছগুলোর কালো রঙের কুঁড়িগুলো ফোটার অপেক্ষায়।
কোকিলের কুহু কুজন এখনও শোনা না গেলেও মাতাল সমীরণ জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে গেছে।
বসন্ত যে এসে গেছে তা প্রথম জানান দিয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্রে কানাইখালি স্টেডিয়াম সংলগ্ন জেলা আনসার অফিসের পলাশ গাছটি। সম্ভবত শত বছরের পুরনো এ গাছটিই প্রতিবছর বসন্ত আগমনের আগাম জানান দেয়।
শীতের শেষার্ধ থেকেই কমলা রঙের ফুল ফুটতে শুরু করে। এখন গাছটি ফুলে ফুলে পূর্ণ যৌবনা। ফুল শুধু গাছেই নয়, গাছের নিচে ফুল ঝরে যেন কমলা কার্পেট বিছিয়ে রয়েছে।
নাটোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা ও তাঁর বোন বাবার সঙ্গে পলাশ ফুল দেখতে এসেছে। সে জানায়, হাত ভরে ফুল কুড়াই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমাউল হুসনার ধারণা, প্রকৃতি থেকে পলাশ ফুল হারিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে, নতুন করে পরিকল্পনা করে গাছ না লাগালে নতুন প্রজন্ম এ ফুল আর চিনবে না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের গেটে বিশাল পলাশ ফুলের গাছটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। হাজারো কুঁড়ির ভিড়ে এ গাছে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। রাণী ভবানী রাজবাড়ি চত্বরের এসি ল্যান্ড অফিসের পেছনে আর সরকারী কর্মকর্তাদের কোয়ার্টারের সামনে শোভা পাচ্ছে পলাশ ফুলের গাছ, আছে ফুল ফোটার অপেক্ষায়। তবে এসি ল্যান্ড অফিসের পেছনের গাছটি হেলে হ্রদের পানিতে হারিয়ে যাওয়ার অভিযাত্রী হয়ে আছে। স্বনির্ভর টিসিসিএ নাটোর সদর উপজেলা কার্যালয়ের পলাশ ফুলের গাছটিও দৃষ্টি নন্দন।
প্রকৃতি থেকে পলাশ ফুল হারিয়ে যাওয়া বিষয়ে শিক্ষার্থীর শংকা নিয়ে কাজ করেছিলেন দু’বছর আগে তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। নাটোর ডিসি পার্কে ছয়টি পলাশ ফুলের গাছ রোপণ করেন তিনি। এম কে অনার্স কলেজ প্রাঙ্গনে কয়েকটি পলাশ ফুলের গাছ রোপণ করেন সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক। পলাশ ফুলের গাছ রোপণ করা হয়েছে শহরের মধ্যে সড়কের মিডিয়ানে। একটু দেরিতে ফুটবে এসব ফুল।
শহর কিংবা গ্রামের রাস্তায় চলতে চলতে চোখে পড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছগুলো এখন কুঁড়িতে আচ্ছাদিত। অল্পদিনেই রক্ত রাঙা রঙে লাল হয়ে উঠবে ঐসব গাছ। শিমুল আর পলাশ বসন্তকে পূর্ণতা দেয়। তবে গন্ধে অতুলনীয় কামিনী আর রাস্তার ধারে কিংবা বনে-বাঁদাড়ে ফুটে থাকা ভেটিসহ অন্যান্য ফুলের কারণে বসন্ত সমৃদ্ধ। এসব ফুল এখন ফোটার অপেক্ষায়।
বসন্তের রুপ রস গন্ধ বলতে গেলে বলতে হবে সজিনা ফুলের কথা, বলতে হবে আম আর লিচুর মুকুলের কথা।
এসব ফুলের গাছে মৌমাছির গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আর এসব ফুলের গন্ধে প্রকৃতিতে বাতাস হয়ে উঠছে মাতাল করা।
তবে সবচেয়ে মাতাল করা গন্ধ বাতাবি লেবুর ফুলে বলে ধারণা অনেকের। এ ফুলের দেখা এখনও মেলেনি।
আকাশ জুড়ে চাঁদের শুক্লাপক্ষ চলছে। সঙ্গীত শিল্পী ও কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা রুপার মতে, বসন্তের সৌন্দর্যকে বুঝতে হলে শুক্লা নবমীর দিনগুলো থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত প্রকৃতির মধ্যে অবগাহন করতে হবে।
বাংলা সাহিত্য কর্মে বিশেষ করে সঙ্গীতে বসন্তের উপস্থিতি অসাধারণ। ‘মধুর বসন্ত এসেছে’-রবীন্দ্রনাথের এ সুরে বসন্ত হয়ে উঠেছে অপরুপ আর মধুময় হয়ে। আর কাজী নজরুলের বসন্ত যেন এসে গেছে ফুলবনে, সেজেছে বনভূমি সুন্দরী, মধুপ উঠেছে গুঞ্জরী!