বাসস
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:৩০

সাতক্ষীরায় ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে

সাতক্ষীরা জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। ছবি : বাসস

সাতক্ষীরা, ৯ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলায় চলতি মৌসুমে ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বেকার যুবক ও চাষীরা অনেকেই বাণ্যিজ্যিকভাবে  কুল চাষে ঝুুঁকছেন।

এর মধ্যে বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, থাই আপেল, বাউকুল, আপেল কুল, তাইওয়ান কুল, নারিকেলি, নাইনটিসহ নানা জাতের কুল। অন্য ফসলের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় সাতক্ষীরার বেশির ভাগ অনাবাদি জমি এখন সারি সারি কুল গাছে ছেয়ে গেছে। সাতক্ষীরার বেলে দোঁয়াশ মাটি ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু কুল চাষের উপযোগী। 

জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা ও চট্রগামসহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হচ্ছে এ কুল। এবার উৎপাদনও মোটামুটি ভালো হয়েছে বলে জানান চাষীরা। সাতক্ষীরার বিভিন্ন প্রকার কুলের সুনাম রয়েছে দেশে বিদেশে। স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায়  জেলার বেকার যুবসমাজ ও চাষীদের একটি বিরাট অংশ এ কুল চাষ করছেন। । কুল চাষ করে এ জেলার অনেকেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়ে দূর করেছে বেকারত্ব, হয়েছে নুতন কর্মসংস্থান।

সাতক্ষীরা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১১২ হেক্টর, তালায় ১৬৫ হেক্টর, দেবহাটা ৪ হেক্টর, কলারোয়ায় ৪৭০ হেক্টর, কালীগঞ্জ ৪৫ হেক্টর, আশাশুনি ২০ হেক্টর এবং শ্যামনগর ২৫ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। গত বছর জেলায় ৮৩০ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়।

সাতক্ষীরা সদরের কুলচাষী শেখ মেহেদী হাসান মিঠু জানান, বাংলা সনের ফাল্গুন মাসের শেষের দিক থেকে পুরাতন কুল গাছের ডাল কেটে ফেলে জমিতে সেচ ও পরিচর্যার কাজ শুরু হয়। কার্তিক মাসের প্রথম দিকে কুল গাছে ফুল ধরার পর বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করা হয়। এ সময় কুল ফুলে মৌমাছির মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটে। অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে  গাছে কুল ধরা শুরু হলে স্বাস্থ্য হানিকর নয় এমন হর্মোন স্প্রে করা হয়। পৌষ মাসের শুরুতেই  কুল পাকতে শুরু করে।  শেষ ফাল্গুন পর্যন্ত কুল পাওয়া যায়। জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার ও ১৫ হাজারের বেশি নারী ও পুরুষ শ্রমিক এসব কুল বাগানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নগরঘাটা এলাকার কুল চাষী দেবাশীষ বলেন, আমি মৎস্য ঘেরের বেড়িতে কুল গাছ লাগিয়েছি। ফলনও ভালো হয়েছে। এখন বাজারে ৮০ থেকে ১২০টাকা কুল বিক্রি হচ্ছে। বাজার ভালো থাকলে আমি আশা করছি ১লক্ষ টাকার বেশি কুল বিক্রি করতে পারব। বিঘা প্রতি ৫০ থেকে ৫৫ কুইন্টাল কুল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

সদর উপজেলার তুজুলপুর গ্রামের কৃষক ইয়ারব হোসেন জানান, এবছর আমি ৩১ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছি। এতে আমার সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু এবছর অতিরিক্তি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারনে কুলের ফলন খুব ভালো হয়নি। এবার লাভ নিয়ে অনেকটা সংশয়ে রয়েছি। ইতিমধ্যে কুল বাগান থেকে কুল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম জানান, কুল একটি মৌসুমী ফল। জেলায় মৎস্য ঘেরের আইল ও পতিত জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। এবার জেলায় ৮৪১ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে খরচ হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। জেলার কুলচাষীদের সব ধরনের পরামর্শ সেবা প্রদান করছে মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা। 

আবহাওয়া ঠিক ঠাক থাকলে জেলায় দেড়শ’ কোটি টাকার বেশি মূল্যে কুল বিক্রি করতে পারবেন কৃষকরা। তিনি আরো জানান, কুল একটি সুস্বাদু,মিষ্টি ও পুষ্টিকর ফল। দেশের মানুষের বিকল্প খাদ্য হিসাবে ও পুষ্টির পূরণে অনেকটা সহায়ক হবে কুল। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কুল বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।