শিরোনাম
লালমনিরহাট, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : লালমনিরহাট জেলা সদরের হারাটি ইউনিয়নের মৃত মনির উদ্দিনের বড় ছেলে পারভেজ কামাল পাভেল (৪৪) নিজ এলাকায় মাছ চাষ করে তিনি এখন সফল। পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি’ প্রবাদটির জ্বলন্ত উদাহরণ তিনি।
পাভেল বলেন, যত বেশি টাকা ইনভেস্ট করব তত বেশি লাভের আশা করা যায় এ প্রজেক্ট থেকে। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকারও বেশি।
এ সফলতার পেছনের গল্পটা কেমন ছিল জানতে চাইলে তিনি খানিকটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। বলেন, কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্য ও একাগ্রতার সঙ্গে এক পা, দুই পা করে আজকের এ অবস্থানে পৌঁছেছেন।
পাভেল জানান ,২০০৫ সালে ২০ হাজার টাকায় একটি পুকুর লিজ নিয়ে শুরু করেন মাছের প্রজেক্ট। পরে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের পথ পেরিয়ে ধীরে ধীরে তার বাবার কাছ থেকে জমি নিয়ে নিজ এলাকায় আরো একটি খামার তৈরি করে মাছের ব্যাপক চাষাবাদ করেন । এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । বর্তমানে নিজ এলাকায় একটি পুকুর ও একটি মাছ চাষের খামার রয়েছে। তার মাছ চাষে সাফল্যতায় এলাকায় ব্যাপক সুনামও রয়েছে।
তিনি জানান, বর্তমানে তার ৩ একর ৭৫ শতাংশ জমিতে একটি খামার ও একটি পুকুর রয়েছে। সেখানে দেশি ছোট মাছের পাশাপাশি রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, সাদাপুটি, তেলাপিয়া,কালবস, লালোটিয়া, বাটাসহ নানান জাতের মাছ। তিনি মাছের পোনা ক্রয় করে প্রজেক্টে এ সেগুলোকে বড় করে বিক্রয় করেন। তিনি আরো বলেন, তার মাছের প্রোজেক্টে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছেন তার ছোট ভাই বায়েজিদ ইসলাম (২০)। বর্তমানে তারা দুই ভাইসহ আরো ৫ জন পুরুষ শ্রমিক তাদের মাছের প্রজেক্ট দেখাশোনা করেন। পাভেলের মাছ চাষে সফলতা দেখে এখন এলাকার অনেকেই মাছ চাষে ঝুঁকছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাভেলের পুকুর পাড়ে অনেক মাছ ব্যবসায়ী মাছ কিনতে এসেছেন। কথা হয় মাছ কিনতে আসা অনেকের সঙ্গে । বাই-সাইকেলের পেছনে বড় সিলভারের হাড়ির মুখে লাল-সাদা কাপড় পেচিয়ে পাভেলের প্রজেক্ট থেকে মাছ ক্রয় করে তারা ছুঁটে চলেন বিভিন্ন বাজারে উদ্দেশ্যে। এসব মাছ বিক্রি হবে জেলার বিভিন্ন বাজারে। তাদেরই একজন মাছ ব্যবসায়ী রঞ্জিত রায় (৫৫)। তিনি বাসস'কে জানান, এখন বাজারে রুই,কাতলা, মৃগেল, সিলভারকার্প, সাদাপুটি, তেলাপিয়া মাছের অনেক চাহিদা রয়েছে। এসব মাছ বাজার নিয়ে গিয়ে বিক্রি করলে ভালো লাভ হবে।
মাছ ব্যবসায়ী রঞ্জিত রায় আরো বলেন, পাভেল একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী। দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে তার কাছে মাছ কিনে বাজারে বিক্রি করে আসছি। এতে তিনি যেমন আর্থিকভাবে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন, ঠিক তেমনি আমরাও লাভবান হচ্ছি কেননা আমরা এখান থেকে মাছ কিনে নিয়ে বাজার বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।
পাভেল জানান, মাছের চাষ করে পরিবার সামলানোর পাশাপাশি তিনি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন, সন্তানদের মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখছেন। একটি লিজের পুকুর দিয়ে শুরু করে এখন তিনি একটি বড় খামারও একটি পুকুরের মালিক। তিনি আরো বলেন,বড় মাছের পাশাপাশি আমার পুকুরের দেশী ছোট মাছের চাহিদা অনেক। আমার সব খরচ বাদ দিয়ে এখন বছরে আয় হয় প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি।
মাছ চাষ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে পাভেল বলেন, সরকার যদি সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে আমার মাছের প্রজেক্টটি আরো বড় পরিসরে করব। আশেপাশে পড়ে থাকা জমিগুলোকে কাজে লাগিয়ে পুকুর ও বিলের সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করব। কম জায়গায় যেন বেশি মাছের চাষ করা যায় এমনটাই প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদি প্রজেক্টটি সম্পন্ন করতে পারি তাহলে এলাকায় অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
তরুণদের উদ্দেশে পাভেলের পরামর্শ : চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হন। এতে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানও করা যায়। এর পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা যায়।
মাছের খাদ্যের ওপর সরকারি শুল্ক কমানোর জন্য আবেদন করেন পাভেল। তিনি বলেন, মাছের খাদ্যের দাম বাড়লেও বেশি দামে মাছ বিক্রি করতে পারেন না। মৎস্য খামারিরা যাতে লোকসানে না পড়েন সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া উচিত।
পাভেল এখন অনেকের জন্য অনুসরণীয়। প্রায়ই পরামর্শ নিতে তাঁর মাছের খামার পরিদর্শনে আসেন নতুন উদ্যোক্তারা। তাঁদেরই একজন মাইদুল ইসলাম (৩৮)। পাভেলের কাছে পরামর্শ নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের মৎস্য খামার। তরুণ উদ্যোক্তা মাইদুল ইসলাম বাসস'কে বলেন, পাভেল ভাইকে দেখে আমার মতো অনেক তরুণ উদ্যোগী হয়েছেন। পাভেল ভাই এখন অনেক তরুণের জন্য অনুসরণীয়। পাভেলের মৎস্য খামারটি বেকারদের স্বাবলম্বী হওয়ার অন্যতম উদাহরণ বলে তিনি মনে করেন। তিনি বাসস'কে আরো বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে পাভেল ভাইয়ের মতো উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তার খামারে এখন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে অবদানের পাশাপাশি আমিষের অভাব পূরণ হচ্ছে।
পাভেলের মৎস্য খামার বেকারদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য অন্যতম উদাহরণ বলে মনে করেন লালমনিরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল। তিনি বাসস'কে বলেন, চাকরির পেছনে না ছুটে পাভেলের মতো এগিয়ে আসতে হবে। তার মাছের প্রজেক্টে অল্প পরিমাণে হলেও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি আমিষের অভাব পূরণ হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমার উদ্যোক্তাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
তাদের সব ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।