শিরোনাম
নওগাঁ, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : এবার একটানা ঘনকুয়াশা ও দীর্ঘমেয়াদী শৈত্যপ্রবাহ না থাকা এবং উন্নতমানের বীজের কারনে গাজরের অধিক ফলন হয়েছে উত্তরের জেলা নওগাঁয়।
তবে জেলার মধ্যে গাজর চাষ হয় সবচেয়ে বেশি মান্দা উপজেলায়। পরিশ্রম ও খরচ কম, উৎপাদন বেশি এবং ভালো দাম পাওয়ায় নওগাঁয় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। চলতি মৌসুমে মান্দা উপজেলায় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে গাজরের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বিলকরিল্যা, কুসুম্বা, বাদলঘাটাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে এ ফসলের চাষ বেশি হয়ে থাকে। এ উপজেলা থেকে অন্তত ৭২ হাজার মণ গাজর উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা।
উপজেলার বিলকরিল্যা গ্রামের কৃষক হানিফ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, এবারে আমি ১৫ বিঘা জমিতে গাজরের চাষ করেছি। হাল চাষ, সার, বীজ, কীটনাশক ও পরিচর্যাসহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ মণ। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় আমার ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
কুশুম্বা গ্রামের গাজর চাষী নিজাম উদ্দিন বলেন, গত বছর তিনি ৬ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছিলেন। সেই আশা থেকে এ বছর বাড়তি ৯ বিঘাসহ মোট ১৫ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। হাল চাষ, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি দিয়ে বিঘাতে খরচ পড়ে ১৪-১৬ হাজার টাকা। বিঘাতে ফলন হয় ১১০ মণ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত। মৌসুমের শুরুতে ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হয়। সে হিসেবে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকা থেকে ৬৪০ টাকা। বর্তমানে সবাই উত্তোলন করায় বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। এতে দাম সামান্য কমেছে। বর্তমানে ১৪-১৬ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। খরচ বাদে বিঘাতে লাভ থাকে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা।
বিলকরিল্যা গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বলেন, প্রতিবারের মতো এবারেও গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে ৯টি মেশিনের সাহায্যে গাজর পরিষ্কারের কাজ চলছে। এজন্য একমণ গাজরে দিতে হচ্ছে ২৫ টাকা করে। প্রতিদিন এসব পয়েন্টে অন্তত ২ হাজার মণ গাজর প্রসেসিং করা হয়। এরপর ট্রাকে করে নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
কুশুম্বা গ্রামের কৃষক ইছাহাক আলী মণ্ডল বলেন, আশপাশের জমিতে অনেকে আলু ও সরিষার আবাদ করেছে। তবে গতানুগতিক সেসব ফসল চাষ না করে গাজরের আবাদ করা হয়। কারন একই ফসল চাষ করলে বাজারে নেয়া হলে দাম কম পাওয়া যায়। এতে লাভের তুলনায় লোকসান হওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। তাই আমরা গাজর চাষ করেছি।
মান্দার গাজর ব্যবসায়ী বিদ্যুৎ হোসেন বলেন, সরাসরি জমি থেকে গাজর সংগ্রহ করা হয়। আবার কৃষকরা বাজারে নিয়ে গিয়েও বিক্রি করেন। এসব গাজর স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। প্রতিদিন এ এলাকা থেকে অন্তত ৫ লাখ টাকার গাজর বেচাকেনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাসস’কে বলেন, অনুকূল আবহাওয়ার কারনে এবার গাজরের অথিক ফলন হয়েছে। উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে দামও বেশ ভালো। জেলায় এ বছর ২৭০ হেক্টর জমিতে গাজরের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ১৫ মেট্রিক টন। এবার মান্দা উপজেলা থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার গাজর বিক্রির সম্ভাবনা করছেন কৃষিবিভাগ।