শিরোনাম
রেজাউল করিম মানিক
রংপুর, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস): জেলার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি)’র তিন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার ভিত্তিক এ তিন প্রকল্প হলো: ১০ তলাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন এবং স্বাধীনতা স্মারক।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই তিন প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরে প্রকল্পের নকশা ও পরামর্শক পরিবর্তন এবং নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে নতুন করে বরাদ্দের আবেদন জানানোর পর দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।
বেরোবি’র সেসময়কার উপাচার্য ড. এ কে এম নূর-উন নবীর সময়ে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগোচ্ছিল। শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পাঁচতলা পর্যন্ত এবং স্বাধীনতা স্মারকের কাজ ৯০ শতাংশ শেষ হয়।
পরবর্তীতে প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ উপাচার্যের দায়িত্ব নেয়ার পর নির্মাণাধীন দুটি ভবনের নকশা পরিবর্তন ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়তি বরাদ্দের আবেদন করেন। সেসময় তিনি ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্মাণ ব্যয় ২৬ কোটি ৮৭ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৬০ কোটি ৯৯ লাখ, শেখ হাসিনা হলের বরাদ্দ ৫১ কোটি ৩৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং স্বাধীনতা স্মারকের নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রস্তাব করেন।
এ ঘটনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ বন্ধ করে ইউজিসিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকল্পগুলোর কাজ বন্ধ করে দেয়।
নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা প্রহরীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে নির্মাণাধীন ভবনের রড, বাঁশ, কাঠসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী। এগুলো পরবর্তী সময়ে আর ব্যবহার করা যাবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমন জানান, উচ্চশিক্ষার সূতিকাগার বলা হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। এখানে গবেষণা ও নতুন নতুন আবিষ্কার হবে, হবে মেধাবীদের মিলনমেলা। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ভবন না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৌলিক কাজে আগ্রহী হচ্ছেন না।
রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হারুন- আল-রশিদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সতেরো বছরেও আমরা গবেষণার জন্য একটি মানসম্পন্ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে পারিনি। এখন উচ্চতর গবেষণার জন্য আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঢাকায় অথবা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে। বর্তমান উপাচার্য সরকারের সাথে যোগাযোগ রেখে দ্রুত এর সমাধান করবেন বলে আশা করি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে দুর্নীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষকরা। বন্ধ কাজ দ্রুত চালু ও প্রকল্পের অনিয়মের ঘটনায় তৎকালীন উপাচার্যের বিচারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
মেগা প্রকল্পের বন্ধ কাজ চালু করতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শওকত আলী বাসসকে বলেন, শেখ হাসিনা হল ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনের কাজ অতি দ্রুতই শুরু করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এই কাজের জন্য কাগজ পাশ হয়ে গেছে। ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি।