শিরোনাম
ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): পিরোজপুর জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিগত চার অর্থবছরে ১৭টি প্রকল্পে ১ হাজার ৬শ ৪৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তছরুপ হয়েছে। এ বিরাট অঙ্কের টাকার দুর্নীতি ও লুটপাটের সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজসহ ১১ জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম উঠে এসেছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর পৃথক ৩টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব অনিয়মের চিত্র উঠে আসে।
"স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে পিরোজপুর জেলায় বিগত ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গৃহীত ১৭ টি প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঘুষ-দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগসমূহের তদন্ত প্রতিবেদন এবং গৃহীত পদক্ষেপ সংক্রান্ত" বিষয়ে আজ সোমবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসমূহকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। প্রত্যক্ষভাবে জড়িত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীগণকে সাময়িক বরখাস্তসহ তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, দুর্নীতিতে জড়িত পিআরএল ভোগরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সকল সরকারি পাওনা স্থগিত করা হয়েছে, তদন্ত প্রতিবেদনে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কে অনুরোধ করা হয়েছে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি)-কে অনুরোধ করা হয়েছে। এছাড়াও জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরণের দুর্নীতি করতে সাহস না পায় বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদার (পিআরএল ভোগরত; সাবেক কর্মস্থল: পিরোজপুর)-এর বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ বাণিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করে ও স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আরো ১টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং মতামত প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেয়া হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাস্তবায়নাধীন ১৭টি প্রকল্পের মোট স্কীম সংখ্যা ১,৮১০টি, যার চুক্তিমূল্য ৩,৫৫৮ দশমিক ৯২ কোটি টাকা, ছাড়কৃত টাকার পরিমাণ ৩,১৭৬ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা এবং সম্পাদিত কাজের টাকার পরিমাণ ১,৫২৯ দশমিক ১০ কোটি টাকা। সম্পাদিত কাজের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১,৬৪৭ দশমিক ৪৮ (একহাজার ছয়শত সাতচল্লিশ কোটি আটচল্লিশ লক্ষ) কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে তছরুপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মে জড়িত ১১ জন সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন- নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার হাওলাদার, সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, হিসাবরক্ষক এ.কে.এম মোজাম্মেল হক খান, সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন মিয়া, উপজেলা প্রকৌশলী মো. বদরুল আলম, সার্ভেয়ার রিপন হালদার, প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আদনান আখতারুল আজম, প্রকল্প পরিচালক সুশান্ত রঞ্জন রায় (পিআরএল ভোগরত), প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ আহম্মদ আলী (পিআরএল ভোগরত), এবং প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান (পিআরএল ভোগরত)।
এছাড়াও স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। দাখিলকৃত ৩টি প্রতিবেদন অনুযায়ী জড়িতরা হলেন পিরোজপুর-১ (নাজিরপুর, পিরোজপুর ও ইন্দুরকানী) আসনের সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ, সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম, সাবেক নাজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরে আলম শাহীন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব জনাব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইএফটিই-ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড (EFTE-ETCL (Pvt) Limited), সিমরান মেয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল জেভি (Shimran Mayan Trade International, (JV), মেসার্স এইচএস ইঞ্জিনিয়ার্স পিরোজপুর (M/S H.S Engineers, Pirojpur), রূপালী কনস্ট্রাকশন, বরিশাল (Rupali Construction, Barishal), ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স, চিটাগাং ইত্যাদি এবং আইবিএএস প্লাস প্লাস (iBAS++) সিস্টেমে অবৈধভাবে বিল পরিশোধে পিরোজপুর ডিস্ট্রিক্ট একাউন্টস এন্ড ফিন্যান্স অফিসার ও তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।