শিরোনাম
যশোর, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): সামনে ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেনটাইনস ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুন। এর কয়েকদিন পর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এর পরপরই আসবে স্বাধীনতা দিবস ও পহেলা বৈশাখ। বিশেষ এ দিবসগুলোতেই ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি।
এ কারণে ফুলের রাজধানী খ্যাত জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুলচাষীরা এ দিবসগুলোকে সামনে রেখেই সব ধরনের ফুলের চাষ করে থাকেন।
আপাতত চাষীদের চোখ ভালোবাসা দিবসের দিকে। গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নসহ আশপাশের মাঠ এখন ফুলে ফুলে ভরা। ভালোবাসা দিবসের চাহিদা মেটাতে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ফুল ব্যবসায়ীরা গদখালী থেকে ফুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ফুলচাষীরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হবে ভালোবাসা দিবসের আগের দুই দিন, দামও কিছুটা বেশি পাওয়া যাবে।
ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে গোলাপের। আজ মঙ্গলবার গদখালী পাইকারী বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন মানের গোলাপ ৫ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত পিস বিক্রি হচ্ছে। গতবছর এই সময়ে তারা এক একটি গোলাপ ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। অন্যান্য ফুলের দামও এবার কম। রজনীগন্ধা ৪ থেকে ৬ টাকা, গ্লাডিওলাস ৬ থেকে ১০ টাকা, জারবেরা ৮ থেকে ১৬ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২ থেকে ৩ টাকা পিস এবং গাঁদা প্রতি হাজার ৩ থেকে ৪’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
হাড়িয়া গ্রামের ফুলচাষী শাহ আলম বলেন, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে তিনি এবার এক বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছিলেন। কিন্তু আবহাওয়াজনিত কারণে তার ক্ষেতের গোলাপ ভালোবাসা দিবসের বেশ কয়েকদিন আগেই ফুটে যায়। ফলে সেগুলো তখন বাজারে ৫ থেকে ৮টা পিস হিসেবে বিক্রি করে দিতে হয়েছে।
একই গ্রামের চাষী আকলিমা খাতুন এবার গোলাপের চাষ করেছেন ৮ কাঠা জমিতে। গত কয়েকদিন ধরেই তিনি নিয়মিত বাজারে ফুল নিচ্ছেন। কিন্তু ৭- ৮ টাকার বেশি দাম পাচ্ছেন না। ক্ষেত থেকে একশ পিস চন্দ্রমল্লিকা তুলে গদখালী বাজারে বিক্রির জন্য এনেছিলেন পটুয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নান। ৫ কাটা জমিতে তিনি এ ফুলের চাষ করেছেন। তার একশ’ পিস চন্দ্রমল্লিকা বিক্রি হয়েছে দুইশ টাকায়। টাওরা গ্রামের কামাল সরকারের ১০ কাঠা জমির গোলাপও আগেভাগেই ফুটে যাওয়ায় মন খারাপ তার। পাঁচ বছর বিরতি দিয়ে এবার আবার গোলাপের চাষ করেছেন বহ্নি গ্রামের রবিউল ইসলাম। পাঁচশ পিস গোলাপ এনেছিলেন। বিক্রি হয়েছে তিন হাজার পাঁচশ টাকায়। কিছুটা ভাল দাম পেয়েছেন নীলকণ্ঠনগরের সুজন। তার ক্ষেতের গোলাপ বড় ও উন্নতমানের হওয়ায় প্রতি পিস ১০ টাকা করে বিক্রি করতে পেরেছেন। এবার দেড় বিঘা জমিতে তিনি গোলাপের চাষ করেছেন।
গদখালী ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে এবার ফুলের চাহিদা গতবারের চেয়েও বেশি। কিন্তু চাষীরা ফুলের দাম পাচ্ছেন অনেক কম। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এবার দিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য বেশি ছিল। তাছাড়া হঠাৎ করেই গরম একটু বেশি পড়া শুরু করে। সে কারণে মাঠের সব ফুল একসাথে ফুটে যায়। এতে বাজারে ফুলের আমদানী হয়ে যায় অনেক বেশি। দামও পড়ে যায়। আবু জাফর আশা করছেন, ভালোবাসা দিবসের আগের দুই দিন ফুলের দাম কিছুটা বাড়তে পারে, তবে তা গত বছরের মতো হবে না।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি ও গদখালী ফুলচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘গরমের কারণে সব ফুল একসাথে ফুটে যাওয়ায় বাজারে প্রচুর ফুলের আমদানী হয়েছে। সে কারণে দাম কিছুটা কমেছে। আবার ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে শবে বরাত হওয়ায় ফুল ব্যবসায়ীরা বেশি করে ফুল কিনতে সাহস করছেন না। এ কারণেও ফুলের দাম কিছুটা কমে গেছে বলে তিনি মনে করছেন।
আব্দুর রহিম বলেন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসের বিশেষ দিবসগুলোতে গদখালীর চাষীরা একশ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু বাজারের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে তাদের এই টার্গেট পূরণ হবে না।
তিনি জানান, গদখালী থেকে সারাদেশেই ফুল যায়। তবে ৩০ শতাংশ ফুল যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে। বাকি ৭০ শতাংশ ফুল যায় অন্যান্য জেলায়। এমনকি পার্বত্য জেলাগুলো এবং দ্বীপ জেলা ভোলাসহ উত্তরবঙ্গের প্রতিটি জেলাতেই ফুল যায় গদখালী থেকে।
ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকার এবছর প্রায় ছয় হাজার চাষী ৬৩০ হেক্টর জমিতে নানারকম ফুলের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র উপহারের জন্য নয়, ফুলের বিকল্প ব্যবহারের জন্য কিছু প্রকল্প হাতে নিতে হবে। তাহলে চাষীরা সারাবছরই তাদের উৎপাদিত ফুলের ভাল দাম পাবেন। ইউরোপে যেসব দেশে বেশি ফুলের চাষ হয়, সেখানে ফুল থেকে সুগন্ধিসহ নানা ধরণের পণ্য তৈরি হয়। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।