বাসস
  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:২৬

মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রতিবেদনের জন্য জাতিসংঘ তথ্যানুসন্ধান দলকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কৃতজ্ঞতা 

ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওপর বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরিতে ব্যাপক কাজের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের তথ্য অনুসন্ধানকারী দলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম আজ বিকেলে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন,‘আমরা তথ্য অনুসন্ধানকারী দল এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয়কে তাদের ব্যাপক কাজ এবং বিস্তারিত প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানাই।’

আলম বলেন, তথ্য অনুসন্ধানকারী দল মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সম্পর্কিত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছে এবং ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী কর্মী এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

আলম আরও বলেন,‘তথ্যের জন্য টিমের আহ্বানের জবাবে, ৯৫৯ জন ব্যক্তি এবং সংস্থা তথ্য দিয়েছে।’

তিনি বলেন,তদন্তের সময়,দলটি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য চেয়েছিল, তারাও অনুরোধকৃত তথ্য সরবরাহ করেছিল। ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ, আইনি বিশ্লেষক, আগ্নেয়াস্ত্র বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ছিলেন।

সংগৃহীত তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে, জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ১৩ জন মহিলা সহ প্রায় ১,৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২ জন শিশু ছিল।

১৩০ জনের প্রাণহানির ফরেনসিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়মিত ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে প্রায় ৭৮ শতাংশ প্রাণহানি ঘটেছে। 

আলম বলেন,‘প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে যে, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। কারণ নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সমর্থকরা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় বিক্ষোভ দমন করার জন্য বেআইনি পদ্ধতি অবলম্বন করেছিল।’

প্রতিবেদন অনুসারে, পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী, সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতৃত্বের জ্ঞাতসারে, সমন্বয় এবং নির্দেশে এসব ঘটনা পরিচালিত হয়েছিল।

সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো রোম সংবিধির ৭ অনুচ্ছেদের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য।

মুখপাত্র বলেন,‘প্রতিবেদনে এই ঘটনাগুলোকে তৎকালীন সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাথে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের (অনুচ্ছেদ ২৯০-২৯২) সাথেও সংযুক্ত করা হয়েছে।’

ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিমের ম্যান্ডেট অনুসারে, জাতিসংঘের রিপোর্টে জবাবদিহিতা মূল্যায়ন, কারণ বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার জন্য সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার অফিস ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম পাঠিয়েছে।

ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং টিম গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যক্রম শুরু করে। প্রায় পাঁচ মাস স্বাধীনভাবে তদন্তের পর, তারা বুধবার তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট, ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে।