শিরোনাম
সাতক্ষীরা, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আম্র মুকুল। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আম বাগানগুলো। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে পরাগের পাগল করা ঘ্রাণ। কবির ভাষায়, ‘ফাল্গুনে বিকশিত, কাঞ্চন ফুল, ডালে ডালে পুঞ্জিত, আম্রমুকুল। চঞ্চল মৌমাছি, গুঞ্জরি গায়, বেণুবনে মর্মরে, দক্ষিণবায়।’
বাংলার প্রকৃতিতে সবে এসেছে বসন্ত। কিন্তু মাঘের মাঝামাঝিতেই ফলের রাজার মুকুল ফুটেছে গাছে গাছে। আমের মুকুলের মৌ মৌ ঘ্রাণে মুখরিত এখন সাতক্ষীরা। গাছে গাছে দুলছে আমের মুকুল। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে সেই মুকুলের উতাল করা ঘ্রাণ। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্র আমগাছ তার মুকুল নিয়ে সোনালি রঙ ধারণ করে সেজেছে এক অপরূপ সাজে। চলতি বছর সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন আম চাষীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটি আম গাছে প্রচুর পরিমাণ মুকুল দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন আম চাষীরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সাতক্ষীরা জেলায় ৫ হাজার আম বাগান রয়েছে। আমের চাষ হয়েছে ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন।
গত মৌসুমে জেলার আম বাগানগুলোর অধিকাংশ বাগানে আশানুরূপ আমের মুকুলের দেখা মেলেনি। গত মৌসুমের তুলনায় এবার জেলার আম বাগানগুলোতে দ্বিগুণ মুকুল এসেছে। আমের এ সোনালি মুকুলে জেলার প্রায় ১৫ হাজার আম চাষীর স্বপ্ন দোল খাচ্ছে। তাই তারা আম বাগান পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে রয়েছে আরও কয়েক হাজার আম চাষী।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। গড় প্রতি ৬০ টাকা কেজি ধরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আমের বাজার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।
জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ পর্যায়ের আম চাষীরা জানান, তাদের আম বাগানগুলোতে মুকুল শোভা ছড়াচ্ছে। মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে বাগানগুলো। জেলার প্রায় ৯৫শতাংশ আমগাছ মুকুলে শোভা পাচ্ছে। এরমধ্যে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, লতা, আশ্বিনা, গোবিন্দভোগ, কালীভোগ, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম রয়েছে।
কৃষি বিভাগের বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছেন জানিয়ে আম চাষীরা আরো জানান, আবহাওয়া ও জলবায়ুগত কারণে সাতক্ষীরার বাগানগুলোতে আগাম মুকুল আসে।
রাজশাহী অঞ্চলের বাগানগুলোর অন্তত ১৫/২০ দিন আগে সাতক্ষীরা অঞ্চলের বাগানে মুকুল আসে। ফলে সাতক্ষীরা অঞ্চলের আমও রাজশাহী অঞ্চলের তুলনায় ১৫/২০ দিন আগে পাকে। এছাড়া সাতক্ষীরার আম খেতেও খুব সুস্বাদু। এ কারণে সাতক্ষীরার আমের প্রতি আলাদা চাহিদা রয়েছে বাজারে। আর খেতে সুস্বাদু হওয়ায় সাতক্ষীরার আম রপ্তানি হয় বিদেশেও।
আমচাষী আইয়ুব হোসেন, আনোয়ারুল ইসলাম, আবুল মাজেদ, ফারুক হোসেন ও রবিউল ইসলামসহ একাধিক আম চাষী জানান, মুকুল আসার আগে আম গাছের পরিচর্যা নিতে হয়। ইতোমধ্যে মুকুল সংরক্ষণ নিয়মিত স্প্রে ও সেচ দেওয়া শুরু হয়েছে। এবার কিছুটা আগে আমের মুকুল আসতে শুরু করেছে। গাছগুলোতে মুকুল আসার পর সাতক্ষীরার বাইরের ব্যবসায়ীরা আসছেন এবং বাগানে বাগানে গিয়ে খবর নিচ্ছেন। আবার অনেকে আগাম আম বাগান কিনছেন। তবে, কালবৈশাখীসহ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষীদের আশা-এবার আমের ভালো ফলন হবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামারবাড়ি) উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম জানান, এবার সাতক্ষীরা জেলার ৪ হাজার ১১৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হচ্ছে। যা থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষিবিভাগ। ইতোমধ্যেই আমের মুকুল এসেছে, এসময়ে সাধারণত হুপার পোকা আক্রমণ করে। যার কারণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বিচিং পদ্ধতিতে সেচ না দেওয়ার কারণে মুকুল শুকিয়ে ঝড়ে পড়ে। এগুলো থেকে রক্ষা পেতে ও ফলন ভালো পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে আমচাষীদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। জেলা জুড়ে রয়েছে আমের বাগান। শেষ মাঘের শীতেই সাতক্ষীরার গ্রাম শহর ও শহরতলীতে আসতে শুরু করেছে আমের মুকুল। বিভিন্ন বাগানের গাছে গাছে নানা জাতের আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ। তবে প্রকৃতির নিয়ম মেনে শেষ মাঘে যে সব গাছে মুকুল আসবে সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে বলে জানান কৃষি বিভাগ। আমের মুকুল টিকিয়ে রাখতে এখন বাগানে বাগানে পরিচর্যায় ব্যস্ত মালিক ও ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ উন্নত পদ্ধতিতে আম চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণের নানা পদক্ষেপ নিতে কাজ করছেন। তবে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আম চাষ করলে যেমন উৎপাদন বাড়বে, তেমন সার্বিকভাবে সংরক্ষণ, পরিবহণ ও রপ্তানিসহ বাজারজাত করতে পারলে কৃষক ব্যাপক লাভবান হবেন এমনটাই বলছেন কৃষি অফিসের কর্মকর্তাগণ। অন্যদিকে আম রপ্তানিতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রশাসনের সহযোগিতা পাওয়ার আশা করছেন আম ব্যবসায়ীরা।