বাসস
  ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯:৩৩
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:০৯

পলিথিনের ব্যবহার কমাতে পাটব্যাগ তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে

// কাশেম মাহমুদ //

ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাজারে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে আনতে দেশের রাষ্ট্রীয় পাটকল সংস্থাগুলোতে পাটের ব্যাগ তৈরি করে বাজারজাত করা যায় কিনা সে ব্যাপারে নতুন করে চিন্তা ভাবনা শুরু হয়েছে।

বিশেষ করে পাটজাত ব্যাগ বাজারজাতের পাশাপাশি ভোক্তাদের এসব ব্যাগ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তনে সচেতন করে তোলার উপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।

দেশের অন্যতম প্রধান পাটকল কারখানা চট্টগ্রামের আমীন জুট মিলস লিমিটেডের প্রকল্প প্রধান এ এইচ এম কামরুল হাসান সরকারের এমন ভাবনার কথা জানান।

তিনি বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আমীন জুট মিলসের কারখানা পরিদর্শন করে পলি ব্যাগের পরিবর্তে পাট ব্যাগ তৈরির সম্ভাবনা জানতে চেয়েছেন। আমরা সরকারের ভাবনাগুলো মেয়রকে অবহিত করেছি। চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রীয় এই পাটকলে কী পরিমান পাট ব্যাগ উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়েছে।

আমিন জুট মিলসের কারখানায় কত পরিমান পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করা যায় তা সরেজমিন দেখতে কারখানা পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের সিটি মেয়র ডা. শাহাদত হোসেন। তিনি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের সাথে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অবস্থান বিবেচনা করে চট্টগ্রাম মহানগরীর মার্কেটগুলোতে পলিথিন ব্যবহার কমিয়ে আনা যায় কিনা সে ব্যাপারে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অবিভক্ত পাকিস্তান শাসনামলে চট্টগ্রাম এবং খুলনা সমুদ্র (মোংলা) বন্দরকে কেন্দ্র করে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী এবং ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলের জলাভূমিতে পাট চাষকে কেন্দ্র করে পাটকল গড়ে তুলেছিলেন। এ অঞ্চলের পাট চাষি এবং কারখানার শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও তারা উচিৎ মজুরী ও মূল্য পায়নি। দেশ স্বাধীন হবার আগে এসব উৎপাদিত পাটের অধিকাংশই পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হতো। এ দেশের উৎপাদিত পাটকে সোনালী আঁশ বলা হলেও এসব সোনালী আঁশের রৌপ্য মজুরীও কৃষকের ভাগ্যে জুটতো না।

সিটি মেয়র কারখানা পদির্শনের সময় বলেন, এই কারখানা থেকে পাটজাত পণ্য ও হাতে বহনযোগ্য ব্যাগের পর্যাপ্ত উৎপাদন ও যোগান দেয়া সম্ভব হলে বাজারে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা সরকারের জন্য সহজ হবে।

ডা. শাহাদত হোসেন বাসস-কে জানান, চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। বর্ষা মওসুমে পানিতে তলিয়ে যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা। এর প্রধান কারণ হচ্ছে অপচনশীল পলিথিনের ব্যবহার এবং এসবের কারণে নগরীর নালা, খাল ও পানি নিস্কাশনের ড্রেনেজগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রতিবছর নগরবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে।

তিনি বলেন, আগামী বর্ষা মওসুমের আগে নালাগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও সংস্কারের জন্য সরকারের কাছে ৩০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এভাবে পলিথিন, পাহাড় কাটা মাটির সিলটেশন সরাতে হাজার কোটি টাকার অপচয় হয়। এক্ষেত্রে পাটজাত ব্যাগ ও পচনশীল থলে ব্যবহার করা সম্ভব হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।    

তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যাগ তৈরির বিষয়ে অগ্রাধিকার দিলে অপচনশীল পলিথিনের ব্যবহার কমাতে সহায়ক হবে।

আমিন জুট মিলসের প্রকল্প প্রধান এ এইচ এম কামরুল হাসান এ সময় সিটি মেয়র ডা. শাহাদত হোসেনকে মিলের উৎপাদন প্রক্রিয়া, মেনটেইনেন্স, ২০৯ জন শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ভাতা সম্পর্কে ধারণা দেন। তিনিও আশা প্রকাশ করে বলেন, মেশিনগুলো সংস্কার করে আধুনিকায়ন করা গেলে পলিথিনের ব্যবহার কমাতে পাটজাত ব্যাগ উৎপাদন সম্ভব।

গত অর্থবছরে এই কারখানায় ২১ হাজার ৮১৬ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে দেশের বাইরে রফতানি হয়েছে ১১ হাজার ৭২০ মেট্রিকটন। স্থানীয় বাজারে বাজারজাত করা হয়েছে ৩ হাজার ৯০৫ মেট্রিকটন। এসব উৎপাদনের জন্য ২ লাখ ১৫ হাজার ১৩০ কুইন্টাল পাট কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ক্রয় করা হয়েছে।

আমীন জুট মিলস লিমিটেড চট্টগ্রাম জেলায় অবস্থিত একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের অধীনে ২৬টি মিলের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ পাটকল।

বিজেএমসি সূত্র জানায়, ২৬টি পাটকলের মধ্যে ঢাকায় ৬টি, চট্টগ্রামে ১০টি এবং খুলনায় ৯টি পাটকল রয়েছে। একটি পাটকল বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত ১০টি পাটকলের মধ্যে রয়েছে আমীন জুট মিলস লিমিটেড, গুল আহমেদ জুট মিলস লিমিটেড, হাফিজ জুট মিলস লিমিটেড, এম এম জুট মিলস লিমিটেড, আর আর জুট মিলস লিমিটেড, বাগদাদ-ঢাকা কার্পেট ফ্যাক্টরী, কর্ণফুলী জুট মিলস লিমিটেড, ফোরাত-কর্ণফুলী কার্পেট ফ্যাক্টরী, গালফ্রা হাবিব লিমিটেড (নন জুট) এবং মিলস ফার্নিশিং লিমিটিড (নন জুট)।

চট্টগ্রাম মহানগরীর ষোলশহরে অবস্থিত এ কারখানা ১৯৫৪ সালে ৮০.৭৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। কারখানাটিতে চটের বস্তা তৈরীর মেশিন রয়েছে ১৮৫ টি, পাটের ব্যাগ তৈরির মেশিন ৯৯৩টি, সিবিসি-৭২টি এবং অন্যান্য মেশিন রয়েছে ১৩৪৪টি। এসব মেশিনের বয়স প্রায় ৬০ বছরের বেশী হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণ খরচ অত্যধিক বলে মিলের প্রশাসন সূত্র জানান।