শিরোনাম
বাবুল আখতার রানা
নওগাঁ, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : মৎস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় প্রায় শতাধিক জলাশয় রয়েছে। নদীভিত্তিক এলাকা হওয়ায় সব সময় এখানে দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছ ধরা পরে। আর এই মাছ দিয়েই উৎপাদন হয় শুটকি। এখানে উৎপাদিত দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ, যেমন- পুঁটি, টাকি, শৈল, চান্দা ও চোপড়ার শুটকির কদর রয়েছে দেশজুড়ে।
বর্ষা মৌসুমে এ জেলায় নদীতে পানি কম হওয়ায় নদী ও জলাশয়গুলোতে দেশীয় মাছ কমেছে। চাহিদা অনুযায়ী নদীতে মাছ না পাওয়ায় মাছের দামও উর্ধ্বমুখী । প্রতি কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে দেশীয় মাছ পুঁটি, খলিশা ও টাকি। ফলে শুটকি উৎপাদন কমেছে। এর সাথে জড়িতরাও কষ্টের মধ্যে পড়েছে। আত্রাই উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া শুটকিপল্লীতে শুটকি বিক্রি করে সারাবছরে ভোরণ পোষণে চলে। তবে এ বছর মাছ সংকটে শুটকি উৎপাদন নিয়েও দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়িরা। মাছের অভাবে অনেক চাতাল এখনো ফাঁকা পড়ে আছে।
জানা যায়, নওগাঁর শুটকি দেশের উত্তরের জেলা সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, জামালপুর ও ঢাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে। শুধু দেশেই নয়, ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায়ও রয়েছে শুটকির কদর। এই মাছগুলো প্রথমে সৈয়দপুর যায়। এরপর সেখান থেকে ট্রেন যোগে ভারতে রপ্তানি করা হয়।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি কম হওয়ায় দেশীয় মাছের প্রজনন কমেছে। উপজেলার প্রধান মৎস্য বাজার আহসানগঞ্জ মৎস্য আড়ত। এই আড়তে মৎস্যজীবিরা সরাসরি মাছ বিক্রি করেন। শুটকি ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে মাছ কিনে পানিতে পরিস্কারের পর লবণ দিয়ে রোদে শুকিয়ে শুটকি তৈরি করেন।
শুটকি ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর কাঁচা মাছ কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। খলিশা ৭৫-৮০ টাকা কেজি, পুঁটি ১০০-১৬৫ টাকা এবং টাকি মাছ ২০০-২২০ টাকা কেজি। তবে শৈল ও বোয়ালসহ অন্যান্য দেশী মাছ না পাওয়ায় শুটকি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, এই এলাকার শুটকি সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী ও ঢাকায় সরবরাহ হয়ে থাকে। এছাড়াও ভারতের অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরায় রয়েছে শুটকির কদর। তবে এবছর পর্যাপ্ত মাছ না থাকায় শুটকির বাজারে পর্যাপ্ত শুটকি যোগান দেয়া কঠিন হবে।
ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুটকি ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, এ বছর খলিশা, পুঁটি, চোপড়া ও টাকি ছাড়া অন্য মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গত বছর এক মৌসুমে ২৫ লাখ টাকার শুটকি বিক্রি করেছিলাম। এ বছর এ পর্যন্ত মাত্র ৫ লাখ টাকার শুটকি তৈরি করেছি। পুরো ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুটকি তৈরি হবে। বাজারে মাছ কম আসায় বেশি দাম দিয়ে মাছ কিনতে হচ্ছে। এতে খরচটাও বেশি পড়ছে।
তিনি জানান, ৩ মন কাঁচা পুঁটি মাছ শুকিয়ে ১ মন হয়। যা বিক্রি হবে ১০-১২ হাজার টাকায়। ৪ মন খলিশা শুকিয়ে হবে ১ মন। যা শুকনো বিক্রি হবে ১০ হাজার টাকা মন।
শুটকি ব্যবসায়ী খালেক হোসেন বলেন, নদীতে পানি থাকলেও বিল বা অন্যান্য যেসব জলাশয় রয়েছে সেখানে পানি নাই। এতে করে দেশীয় মাছ কম হচ্ছে। আবার চায়না জাল (রিং জাল) দিয়ে মাছ শিকারের কারণেও প্রজনন কমেছে। এতে করে প্রতি বছরই কমছে দেশীয় মাছ। কাঁচা মাছ কম থাকায় শুটকির চাতাল ফাঁকা পড়ে রয়েছে। মাছের প্রজনন বিষয়ে মৎস্য অফিসের সঠিক তদাকরির প্রয়োজন।
এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় ২৬ জন শুটকি ব্যবসায়ী আছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরো ৩০০জন এই ব্যবসার সাথে জড়িত। গত বছরের তুলনায় এ বছর বর্ষায় পানি কম হওয়ায় সঠিক সময়ে মাছের প্রজনন হয়নি। ফলে নদীতে মাছের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। তারপরও এ জেলায় এবছর প্রায় ১৪২ টন শুটকি উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা।