বাসস
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৭

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলা একাডেমি ও বিসিএসআইআর-এ দুদকের অভিযান

ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বাংলা একাডেমি এবং নানাবিধ আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, গবেষণায় অনিয়ম, পুরস্কার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, বাংলা একাডেমিতে জনবল নিয়োগে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আজ একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানকালে টিম জানতে পারে,  বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৮০টি শূন্য পদের বিপরীতে আবেদন আহ্বান করা হলে ৫০ হাজারেরও অধিক চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। ৪ হাজার প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখানো হয় কিন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় মাত্র ৫০০ জনকে ডাকা হয়। অধিকন্তু ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ না করে গোপনে ১৭৫ জনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় বলে দুদক টিমের কাছে পরিলক্ষিত হয়। এছাড়াও যোগদানকৃত ১৩৩ জনের মধ্যে ৪৫ জনই ইতোপূর্বে বাংলা একাডেমিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত- এ ধরণের তথ্যও পাওয়া গেছে। 

অভিযানকালে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র ও বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, বাংলা একাডেমিতে বিভিন্ন পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষার লিখিত অংশে কম নম্বর পেলেও ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বেশি প্রদান করা হয়েছে এবং তারা চূড়ান্তভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়াও, চূড়ান্ত ফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ না করে গোপনে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়- যা স্বাভাবিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় বলে টিমের কাছে প্রতীয়মান হয়। 

এদিকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (বিসিএসআইআর) নানাবিধ আর্থিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, গবেষণায় অনিয়ম, পুরস্কার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদক, প্রধান কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়।  অভিযানকালে কেমিক্যাল মেট্রোলোজি অবকাঠামো সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পে নিজস্ব ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দিয়ে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন, স্পেসিফিকেশন ও বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্রয় সম্পাদন না করে অর্থ উত্তোলনসহ অন্যান্য অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক টিম। 

সরেজমিন পরিদর্শনে ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন মেশিনারিজ ক্রয়ের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বেই ঐসকল মেশিনারিজ ক্রয় করে ইনস্টলেশন করা হয় বলে তথ্য পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ক্রয়কৃত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্য দেখিয়ে টেন্ডার বাস্তবায়ন করে ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে, দুদক টিমের কাছে এ ধরনের প্রতীয়মান হয়। 

অভিযানকালে সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই প্রকল্পের আওতায় কেমিক্যাল ক্রয় হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু পরবর্তীতে ৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার টেন্ডার দেখানো হয়েছে, ফলে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। টিম অভিযানকালে ১১টি যন্ত্রের অস্তিত্ব খুঁজে পায়, যেগুলো কোন রকম টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রয় করা হয়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এগুলো আগামী অর্থবছরে টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয়কৃত দেখানো হবে- যা সম্পূর্ণভাবে বিধিবহির্ভূত। 

এ ছাড়া টাঙ্গাইলে খাদ্য গুদামের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ইনভয়েস জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের টাংগাইল জেলা কার্যালয় থেকে অপর একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান পরিচালনাকালে সংশ্লিষ্ট ইনভয়েস চালানের ছায়ালিপিসহ অন্যান্য রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়। ইনভয়েসে অগ্রিম স্বাক্ষরের মাধ্যমে গুদামের কোনো চাল আত্মসাৎ হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ের লক্ষ্যে দুদক টিমের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা গুদামগুলোতে যৌথ স্বাক্ষরে সিলগালা করেন। রেকর্ডপত্রের সাথে গুদামঘরের মজুতকৃত চালের পরিমাণের হিসাব যাচাই করে টিম কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করবে।