শিরোনাম
রংপুর, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দল -বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশের সাথে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করে প্রতিবেশী ও বন্ধুত্বসুলভ আচরণ বজায় রাখার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতকে পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন। আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, তাহলে আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্তে গুলি করে হত্যা এবং আমাদের সঙ্গে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করেন।’
মির্জা ফখরুল আজ সোমবার রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মাঝখানে তিস্তা রেলওয়ে সেতু সংলগ্ন চরে ‘তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি’র উদ্যোগে ‘তিস্তা রক্ষা ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের’ দাবিতে আয়োজিত এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
‘তিস্তা নদী রক্ষা কমিটি’র প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপি’র রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ।
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের পায়ের উপরে দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। সেটা হতে হবে সম্মানের সাথে, আমার যে পাওনা সেটা আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে।’
'জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সোমবার একই সাথে উত্তরাঞ্চলীয় লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ১১টি স্থানে স্থানীয় বিএনপি’র উদ্যোগে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়াও পদযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলার প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ‘তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।'
দু’দিনের এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি আগামীকাল মঙ্গলবার কর্মসূচির শেষ দিনে সমাপনী বক্তব্য রাখবেন।
কর্মসূচি বাস্তবায়নে তিস্তার চরে মঞ্চ তৈরি, খাবার ব্যবস্থা, তাঁবু টানিয়ে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সমাবেশে শিক্ষার্থী, কৃষক, মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, শিক্ষক, চিকিৎসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত হয়েছেন। তারা ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করা এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকে যে আন্দোলন শুরু হলো, এটা আমরা শেষ পর্যন্ত নিয়ে যাব। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ফারাক্কা অভিমুখে মার্চ করেছিলেন গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের আসাদুল হাবিব দুলু ভাই হাজারো মানুষকে একত্রিত করে ডাক দিয়েছেন জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই। এটা শুধু শ্লোগান নয়; তিস্তা পাড়ের মানুষের বাঁচার আহাজারি বেরিয়ে এসেছে। আজকে এখানের মানুষের করুণ অবস্থা। একদিকে যখন তারা বাঁধের গেট খুলে দেয়, পানির তোড়ে আমাদের ঘর, বাড়ি, গ্রাম, ফসলের মাঠ ডুবে যায়। আবার যখন গেট বন্ধ করে দেয়, তখন খরায় খট-খট হয়ে যায়। তিস্তা পাড়ের মানুষের দু:খ আর যায় না। আজ থেকে বহুদিন আগে থেকেই এই তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আমরা কথা বলছি। পাকিস্তান আমলে বলেছি, এখন বাংলাদেশ সময়েও আমরা বলছি।’
বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সরকার আসলো। সবাই ভাবলো, ভারতের বন্ধু আওয়ামী লীগ। সুতরাং তিস্তার পানি মনে হয় এবার পেয়েই যাবে, কিন্তু লবডঙ্কা। ১৫ বছরে তারা বাংলাদেশ বেচে দিয়েছে কিন্তু তিস্তার এক ফোঁটা পানি আনতে পারে নাই।ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টা নদী আছে, সবগুলো নদীর উজানে তারা বাধ দিয়ে দিয়েছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা পানি নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ ফসল ফলাতে পারে না, জীবন-জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়। এজন্য উত্তরাঞ্চলের প্রত্যেক মানুষকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। একদিকে ভারত আমাদেরকে পানি দেয় না, অন্যদিকে আমাদের শত্রুকে (শেখ হাসিনা) তারা তাদের দেশে বসিয়ে রেখেছে। দিল্লিতে তিনি (হাসিনা) রয়েছেন রাজার হালে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই সংগ্রাম এই এলাকার মানুষের বাঁচা-মরার সংগ্রাম। এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দেবো না। আজকে অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদেরকে নিরপেক্ষ সরকার বলে, কিন্তু এখানে নিরপেক্ষ থাকলে চলবে না। মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে, যে পানির ন্যায্য হিস্যা চাই। এছাড়াও, খুব তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।’
উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘লড়াই না করে কিছু পাওয়া যায় না, সেই লড়াই করেই আমরা তিস্তার পানি আনবো। অধিকার আদায় করে নেবো। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’
লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলায় অন্য ১০টি স্থানে পৃথকভাবে অনুষ্ঠিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্নয়ক জোনায়েদ সাকিসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা।