বাসস
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০:২৫

মুরাদনগরে সরিষা-ধনিয়ায় মধু উৎসব

কুমিল্লার বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু হলুদ সরিষা ও সাদা ধনিয়া ফুলের সমারোহ। ছবি: বাসস

মহসীন কবির

কুমিল্লা (উত্তর), ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার মুরাদনগরে বিস্তীর্ণ মাঠে শুধু হলুদ সরিষা ও সাদা ধনিয়া ফুলের সমারোহ। হলুদ ও সাদা ফুলের ডগায় ডগায় উড়ছে মৌমাছি। সেই মৌমাছির দল ফুল থেকে মধু নিয়ে ছুটছে জমির পাশে রাখা মধুর বাক্সে। আবার ফিরছে জমিতে। দেখে মনে হচ্ছে এ যেন সরিষা-ধনিয়ায় মধু উৎসব ।

সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেলো কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা দক্ষিণ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামে। চাষীরা জানান এ সময়ে মৌমাছির মাধ্যমে ফুলের বেশি পরাগায়ন হচ্ছে। এতে বাড়বে ফসল উৎপাদন। এদিকে বেশি মধু আহরণের আশায় উৎসবের আমেজে কাজ করছেন মৌ চাষীরা। শুধু নোয়াগাঁওয়ে নয় আশপাশের কমপক্ষে ১০টি গ্রাম বি-চাপিতলা, রামচন্দ্রপুর, আমিননগর, শ্রীকাইল, রোয়াচালা, পীরকাশিমপুর, কামাল্লা, কাগাতুয়া ও আকুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠেও একই চিত্র।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ১৫ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মুরাদনগরেই চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৯ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও এ উপজেলায় ধনিয়া চাষ হয়েছে ৪৫০ হেক্টর জমিতে।

নোয়াগাঁও গ্রামের চাষী আনোয়ার বলেন, আগে আমাদের ভুল ধারণা ছিল। মৌমাছি এলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে জানলাম-মৌমাছির কারণে ২০-২৫ ভাগ ফসল উৎপাদন আরও বাড়ে।

বি-চাপিতলা গ্রামের মৌ চাষী আবুল হাসেম বলেন, মুরাদনগরে মধুর খোঁজে শতাধিক চাষী বাক্স ফেলেছেন। তিনি নিজেও ২৫০টি বাক্স ফেলেছেন। তিনি আশা করছেন চলতি মৌসুমে ৪ টন মধু পাবেন। তিনি বলেন, এবার মধু আহরণে বিপ্লব ঘটাতে চাই।

স্থানীয় একাধিক চাষী জানান, এসব গ্রামে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা, যশোর, সাতক্ষীরা, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও পাবনা থেকে মৌ চাষীরা এসেছেন। যদিও প্রথমে কিছু এলাকার কৃষক মৌ বক্স স্থাপনে আপত্তি জানিয়েছিলেন।

পরবর্তীতে উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. রায়হান ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. নুর আলম মাঠে গিয়ে তাদের মৌ বক্স স্থাপনের সুফল বর্ণনা করলে কেউ আর বাধা দেননি। এদিকে মৌ চাষীরা জমে যাওয়া মধু সংগ্রহ করছেন। ট্রে থেকে পড়ছে তাজা টসটসে মধু। বাতাসে ভাসছে মধুর মিষ্টি সুবাস। স্থানীয়রা তাজা মধু কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন।

মুরাদনগর উপজেলাা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন- জেলার প্রায় অর্ধেক সরিষা চাষ হয়েছে মুরাদনগরে। এখানে কৃষকের ফসল উৎপাদন বাড়াতে মৌচাষীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জেনেছি, গত বছর ১৭ টন মধু পাওয়া গেছে। এবার জমি ও মৌমাছির পরিমাণ বেড়েছে। তাই ৪০ টন মধু পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, জেলায় এবার ১৫ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে মুরাদনগরেই চাষ হয়েছে ৯ হাজার ৯ হেক্টর জমিতে। সরিষা ছাড়াও মোৗমাছিদের মধু সংগ্রহ সহজ করতে নির্দিষ্ট এসব এলাকার আশপাশে ধনিয়াসহ এ সংক্রান্ত অন্যান্য ফসল চাষকেও আমরা উৎসাহিত করে আসছি। এক্ষেত্রে কাউকে কাউকে প্রণোদনাও দেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।