বাসস
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:০৮

কৃষিতে সফল হয়েছেন শেরপুরের উদ্যোক্তা আনোয়ার

কৃষিতে সফল উদ্যোক্তা আনোয়ার। ছবি : বাসস

 জাহিদুল খান সৌরভ

শেরপুর, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন (২৯)। তিনি উপজেলার নলকুড়া ইউনিয়নের গোমড়া গ্রামের মো. মোজাম্মেল হক (৬০) ও আছমা খাতুন (৪৫) দম্পতির সন্তান।

২০১১ সালে ঝিনাইগাতির রাংটিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ২০১৩ সালে আলহাজ্ব শফিউদ্দিন আহম্মেদ কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেন। এরপর চাকুরীর সন্ধানে ২০১৪ সালে পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। হঠাৎ একদিন ভাবেন ফিরে আসবেন নিজ গ্রামে, কাজ করবেন কৃষি নিয়ে। পরে ২০১৬ সালের শুরুর দিকে ফিরে আসেন ভারত সীমান্ত ঘেষা গ্রাম গোমড়াতে। 

কৃষি নিয়ে কাজ করার শুরুতে আনোয়ার বাড়ির পাশে পতিত জমির ৫ বিঘা জমিতে সিম ও ৩ বিঘা জমিতে কাকরোলের চাষ করেন।  সিম ও কাকরোল চাষে আনোয়ারের খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং খরচ বাদে তার লাভ থাকে প্রায় ১ লাখ টাকা।

আনোয়ার জানান, ছোট বেলায় দেখতাম বাবা, চাচারা কৃষি নিয়ে কাজ করতেন। তখন থেকেই মূলত কৃষি কাজে আগ্রহ হতো। ঢাকা থেকে চাকুরী ছেড়ে গ্রামে ফেরার পর যখন কৃষি নিয়ে কাজ শুরু করলাম তখন ঝিনাইগাতি উপজেলা কৃষি বিভাগ আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।

কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমি নতুন নতুন সবজি ও ফসল চাষে আগ্রহী হতাম। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে শেরপুরে প্রথম বারের মত মরুভূমির ফল রকমেলন চাষ করি। যেটাকে অনেকে সাম্মাম নামে চিনে থাকেন। পরীক্ষামূলকভাবে ১ বিঘা জমিতে সম্মাম চাষে আমার খরচ হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।  

তিনি আরো জানান, উচ্চমূল্যের ফল হওয়ায় সম্মামের দাম ভাল ছিল। প্রতিটি ফল প্রায় দুই কেজি ওজনের হতো। পাইকারি বাজারে যার মূল্য ছিল ২০০ টাকা কেজি এবং প্রতিটি সাম্মাম প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি করা হয়েছিল। সবশেষ খরচ বাদে আমার লাভ ছিল ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। তরুন এই কৃষি উদ্দোক্তা আরো বলেন, সিম, বেগুন, কাকরোল ও সাম্মাম চাষের পর ২০২৩ সালো আমি গ্রীষ্মকালীন তরমুজের চাষ করি। এটিও শেরপুরে বাণিজ্যিকভাবে ১ম বারের মত চাষ করেছিলাম আমি। দেখতে হলুদ রংয়ের সুমিষ্ট এই তরমুজ চাষে আমার খরচ হয়েছিল ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা এবং খরচ বাদে আমার লাভ হয়েছিল ১ লাখ টাকারও বেশি। আনোয়ার আরো জানান, আমার ব্যাতিক্রমি ফসল চাষ দেখতে অনেকেই আসেন। কেউ ইউটিউবের জন্য ভিডিও তৈরি করেন, কেউ ছবি তুলেন, কেউ আবার পছন্দের নতুন ফলটি পরিবারের জন্য কিনে নেন। 

এছাড়া আশপাশের অনেক প্রতিবেশী আমার মত নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হন। তিনি বলেন, শেরপুর জেলার মাটি অত্যন্ত উর্বর। তাই বাড়ির পাশে পতিত জমিগুলো ফেলে না রেখে চাষ করা যেতে পারে। বিশেষ করে যারা তরুন বেকার, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো চাকুরীর পিছনে না ছুটে কৃষি উদ্যোক্তা হন। একই গ্রামের প্রতিবেশী কৃষক আব্দুল কাদির (৪০) বলেন, তরুন কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার কৃষিকে ভালবাসেন ও কৃষি কাজকে পছন্দ করেন। কৃষি কাজ করেও যে কেউ সফলতা পায় আনোয়ার তার অন্যতম উদাহরণ।তাই শেরপুরের বেকার যুবকদের প্রতি আমাদের আহ্বান অযথা সময় নষ্ট না করে যেন কৃষি নিয়ে কাজ করে।

একই উপজেলার তরুন কৃষি উদ্যোক্তা শান্ত সিফাত জানান (২৪) জানান, বর্তমান এই আধুনিক সময়ে কৃষি একটি লাভজনক পেশা।  আমাদের উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার ভাই ব্যাতিক্রমি কৃষি নিয়ে কাজ করতে ভালবাসেন। তাই আমি একজন তরুন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে আনোয়ার ভাইয়ের কাজ অনুসরণ করি। 

এবিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচলক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বাসস'কে বলেন, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছে জেলা কৃষি বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় কৃষি উদ্যোক্তাদের নতুন নতুন ফসল চাষে পরামর্শ এবং সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় কৃষি উদ্যোক্তাদের সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় এনেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।