শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : দীর্ঘ ৭ বছর পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বর্ধিত সভায় দলের তৃণমূল নেতারা অংশ নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন, বর্ধিত সভার বার্তা দেশের স্বার্থে দলে সুদৃঢ় ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর মুক্ত ও স্বাধীন পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপির এই বর্ধিত সভায় দলটির নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়ে আরও ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তারেকুল ইসলাম রাজুর কাছে কেন্দ্রীয় বিএনপির বর্ধিত সভার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বাসসকে বলেন, ‘বর্ধিত সভায় আমাদের দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে। বহু বছর পর আমার নেত্রীর বক্তব্য অনলাইনের মাধ্যমে দেখতে পেলাম। ম্যাডামকে দেখার পর আমার ভেতর যে আবেগ তৈরী হয়েছে- তা আগামি দিনে দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে কাজে লাগাতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘ম্যাডাম আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথাসহ যে সব কথা বলেছেন, সবগুলোই আমাদের মনের কথা বলেছেন। আমরা এই বর্ধিত সভা থেকে যে বার্তা পেলাম, তাহলো- সুদৃঢ় ঐক্য রুখে দিতে পারে সকল ষড়যন্ত্র। আমরা সকল ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করে ইস্পাতের মতো দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।’
২০১৮ সালে বিএনপি থেকে কুমিল্লা- ৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন চিঠি পাওয়া নেতা এটিএম মিজানুর রহমান বাসস’কে বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি’র অগণিত নেতাকর্মীর ওপর পরিচালিত নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম ও হত্যার পরও দলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য বজায় ছিল। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দুঃসময়ে দলের মিছিলের একদম শেষে থাকা কর্মীকেও উপযুক্ত মূল্যায়ন করতে হবে। আজকের বর্ধিত সভার বার্তাও একই রকম।
তিনি বলেন, দলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন হবে। নিরাপদ গণতান্ত্রিক ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিএনপির নেতৃত্বে আমরাই এগিয়ে যাব। এটিই প্রত্যয়।
যশোরের চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে মুক্ত পরিবেশে এ ধরণের সভায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব আনন্দিত। মাঝে মাঝে এমন মিলিত হওয়ার সুযোগ আমরা চাই, তাতে আমরা তৃণমূল নেতৃবৃন্দ আরও উজ্জীবিত হয়ে দল ও দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারব।
মাসুদুল হাসান আরও বলেন, আজকে সভায় অংশগ্রহণ করে আমার ভেতর অনুধাবন হয়েছে, ঐক্যবদ্ধ থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে আরও সুসংগঠিত করতে হবে। দলীয় নেতা-কর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে। সামনের জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর) সেলিমুজ্জামান সেলিম বাসসকে বলেন, ৭ বছর পর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রাণ তৃণমূল নেতাদের নিয়ে আজ বর্ধিত সভা করেছেন। তাদের কথা শুনেছেন শীর্ষ নেতারা।
তিনি মনে করেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে একটি মুক্ত পরিবেশে এই বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত খুবই সময়োপযোগি, বিশেষ করে আগামি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আজকের এই সভা কেন্দ্রীয়সহ তৃণমূল বিএনপির নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাট ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। আপনারা সকলেই জানেন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দেশে স্বাভাবিকভাবে কোন সভা-সমাবেশ করা যেতো না, আর বিএনপির সভা হলে তো কথাই নেই। নির্ভয় পরিবেশে আজকের এই বর্ধিত সভায় সমবেত হতে পেরে তৃণমূল নেতৃত্ব উৎসাহিত হয়েছেন বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, বিএনপির তৃণমূলের নেতারা আমাদের দলের ঐক্যের প্রতীক চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুখ দিয়ে যে কথাগুলো শুনেন সেগুলো তারা আমানত হিসেবে মনে করেন। তাই আজ সভা থেকে দলীয় চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে আমরা যে বার্তা পেলাম, তা কাজে লাগিয়ে দলকে আমরা আরও শক্তিশালী করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) বিলকিস জাহান শিরিন বাসসকে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্টরা বিগত ১৫-১৬ বছর দেশের সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে ফেলেছিল। বিরোধী দল ও মতের কোন মূল্য ছিল না সে সময়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে গেছে। দেশকে এখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরানোর কাজ চলছে। তাই এই মুহূর্তে দেশের জনগণ বিএনপির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আজ বর্ধিত সভায় দলের চেয়ারপার্সন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে আমরা অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমরা আরও ঐক্যবদ্ধ থেকে দলকে আরও শক্তিশালী করার প্রেরণা এই বর্ধিত সভা থেকে পেয়েছি।
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ড রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস’কে বলেন, ৭ বছর পরে দলের বর্ধিত সভায় অংশ নিয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং আশাবাদী। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আজ তার বক্তব্যে যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন, তাতে দলের নেতাকর্মীরা আরও বেশি উজ্জ্বীবিত হবেন।
তিনি বলেন, আজকের এই দিনে দলের প্রতি আমার প্রত্যাশা থাকবে, মাঠের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা যেন সঠিক মূল্যায়ন পান। পাশাপাশি আগামী দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে আমরা যেনো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। জনগণের পাশে থাকতে পারি, তাদের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
আজ সকাল ১১টা ১০ মিনিটে জাতীয় সংসদের এলডি হলে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিতীয় এ বর্ধিত সভা শুরু হয়।
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারর্সন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভায় বক্তব্য দেন। এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তৃতা দেন।
সভার শুরুতে গত ১৬ বছরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ এবং দলের প্রয়াত নেতৃবৃন্দের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শোক প্রস্তাব পাঠশেষে স্বাগত বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যের পর উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সভার মোনাজাতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর কথা উল্লেখ করা হয়।
উদ্বোধনী ভাষণের পর থেকে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর দুপুরের বিরতি দেওয়া হয়। জোহরের নামাজ ও দুপুরের খাবার বিরতির পর দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়। সারাদেশ থেকে আসা নেতারা এই সেশনে বক্তব্য দেন।
সভাপতি তারেক রহমানের সমাপনী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রাতে শেষ হবে বর্ধিত সভার দ্বিতীয় অধিবেশন।
সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল কর্মকর্তা ও সদস্য অংশ নেন। দলের ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা অংশ নেন। মহানগর, জেলা, থানা-উপজেলা-পৌর কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবরা অংশ নেন।
২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী ও মনোনয়ন পেতে ইচ্ছুক যে প্রার্থী প্রাথমিক পত্র পেয়েছিলেন, তারাও এই সভায় অংশ নেন।
এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে দলের বর্ধিত সভা ডেকেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সভার পর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।