বাসস
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২:৫০

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বৃহস্পতিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে দিনব্যাপী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫( বাসস): সৌরভ একসময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতেন। চোখে ছিল স্বপ্ন, কণ্ঠে ছিল প্রতিবাদের জোর। কিন্তু হঠাৎ কতগুলো বুলেট তার জীবনকে করে দিয়েছে তছনছ। সৌরভ আজও সেই বুলেটের ক্ষত বহন করে চলেছেন, শুধু শরীরে নয়, মনেও।

অসহিষ্ণুতা, ঘুমের ব্যাঘাত, হঠাৎ বুক ধড়ফড় করা, অল্প শব্দেই চমকে ওঠা - সৌরভ এখনও মানসিকভাবে স্বাভাবিক হতে পারেননি। একসময় যিনি অন্যদের সাহস জোগাতেন, আজ নিজেই লড়ছেন এক অদৃশ্য যন্ত্রণার সঙ্গে।

সৌরভ শুধু একা নন। জান্নাত, রাকিব, জুনায়েদ, সালেহ, জিসান—তারা সবাই একই যন্ত্রণার সঙ্গী। বুলেট  কারো চোখে লেগেছে, কারো আবার পায়ে লেগে কেটে ফেলতে হয়েছে একাংশ, কেউ শরীরের গভীরে ধারণ করছে লুকিয়ে থাকা বুলেট। শারীরিক ক্ষত শুকিয়ে গেলেও দিনে দিনে মানসিক ক্ষত গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মানসিক অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে দিনব্যাপী ‘নির্বাণ’ কর্মশালার আয়োজন করে সফরন ফাউন্ডেশন ও সংযোগ ফাউন্ডেশন। কর্মশালায় আলোচকরা আন্দোলনকারীদের মানসিক সুস্থতা, আত্ম-পরিচর্যা ও পুনর্বাসনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধারা। যারা চেয়েছিলেন নিজেদের সাহস ও আত্মত্যাগ দিয়ে ন্যায়ভিত্তিক সমাজের ভিত্তি গড়তে। কিন্তু রাজপথের লড়াই শেষ হলেও তাদের মানসিক যুদ্ধ এখনো চলছে।

আলোচনায় গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, শাশা ডেনিমসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শামস মাহমুদ।

এছাড়াও সফরন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপার্সন সৌমিক দত্ত এবং সংযোগ ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার ইমতিয়াজ আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
বক্তাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে কীভাবে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের আত্মত্যাগ পুরো দেশের মানুষকে সাহস দিয়েছে।

কর্মশালায় মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিৎসকরা দিনব্যাপী সর্বাধুনিক মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের আত্মযত্ন নেয়ার পদ্ধতি শিখন ও তাদের মানসিক শক্তিকে দৃঢ়করণে লক্ষ্যে অংশগ্রহণমূলক সেশন পরিচালনা করেন।

প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন হেলথ ইকুইটি ইনিশিয়েটিভ (হেই) মালয়েশিয়ার ক্লিনিক্যাল সুপারভাইজর জোহরা পারভীন এবং ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আজিজুল ইসলাম।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক তালুকদার এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক রাইহানা শারমিন কর্মশালা সঞ্চালনা করেন।