বাসস
  ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৫:৫১
আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৬:৩৫

নওগাঁর আম গাছে মুকুলের সমারোহ

গাছে গাছে মুকুলের সমারোহ। ছবি : বাসস

নওগাঁ, ৪ মার্চ, ২০২৫ (বাসস) : গত কয়েক বছর আম উৎপাদনে শীর্ষে রয়েছে বরেন্দ্র জেলা নওগাঁ। প্রতি বছর এক হাজারেরও বেশি জমিতে নতুন নতুন আম বাগান গড়ে উঠছে এ জেলায়। ধান-চালের পাশাপাশি আম চাষেও নীরব  বিপ্লব ঘটছে নওগাঁয়। মাটির বৈশিষ্ট্যগত এঁটেল মাটির কারনে এখানকার আম সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

জেলার সপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর, পত্নীতলা, মান্দা, ধামইরহাট ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্রভুমি। এ অঞ্চলে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে হওয়ায় বছরের বেশি সময় ধরে জমি পতিত থাকে। বর্ষা মৌসুমে ঠাঁ ঠাঁ এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে শুধুমাত্রা আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। ধানের চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্রভুমির এসব উপজেলায় প্রতি মৌসুমে শত শত বিঘা জমিতে উন্নত জাতের বানিজ্যিক আম বাগান গড়ে উঠছে। বর্তমানে আম উৎপাদনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে শীর্ষে রয়েছে নওগাঁ জেলা। এখানকার আম সুস্বাদু হওয়ায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।

মুকুলের ম-ম ঘ্রাণ এখন নওগাঁর বাতাসে। আবহাওয়া এবার আমের অনুকূলে। আমের মুকুলের আধিক্য দেখে বাম্পার ফলনের আশা চাষিদের। কৃষি বিভাগ বলছেন, এখন পর্যন্ত আবহাওয়া আম চাষের অনুকূলে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে। এবার গত বছরের চেয়ে ২০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বেড়েছে। আশা করা হচ্ছে, গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফলন বাড়তে পারে।

আর চাষিরা বলছেন, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। 

সে হিসেবে গত বছর নওগাঁয় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার তাঁরা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে আছেন। দেশের অন্যতম আম উৎপাদকারী জেলা নওগাঁয় গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমের মুকুল সবচেয়ে বেশি এসেছে। বাগানে প্রায় সব গাছেই মুকুল এসেছে। মুকুলকে ছত্রাকের আক্রমন থেকে বাঁচাতে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তারা। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আম গাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা। 

এদিকে বাগানে মুকুল আসা শুরু করতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে উঠেনি। মুকুলে গুটি হওয়ার পর বাগান কেনাবেচা জমে উঠবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ করা হয়েছে। গত বছর এই পরিমান ছিল ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩১ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। জেলার সাপাহার, পোরশা ও পত্নীতলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয়। বাগানগুলোতে অধিকাংশ গাছেই ব্যাপক মুকুল এসেছে। মুকুলে আম গাছের পাতা ঢেকে গেছে। 

কোনো কোনো বাগানে শতভাগ গাছে মুকুল এসেছে। আবার কোনো কোনো ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে।

সাপাহার উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানা স্থানীয় বাজারে আম বিক্রি ছাড়াও বিদেশেও আম রপ্তানি করে থাকেন। সোহেল রানা বলেন, গত বছর তাঁর বাগানে ৫০-৬০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এবার এখন পর্যন্ত তাঁর বাগানে ৯০ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছে। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আমের জন্য অনুকূলে আছে। সেজন্য গাছে ছত্রাকনাশক কীটনাশক স্প্রে করছেন তিনি।

পোরশা উপজেলার বড়গ্রাম এলাকার আম চাষি রায়হান আলম বলেন, গত বছর শীতের কারনে অনেক লেটে মুকুল এসেছিল। গাছে মুকুল আসতে প্রায় ১৫-২০ দিন লেট হয়েছিল। মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়েও অনেক গাছে মুকুল ধরেছিল। তবে সে তুলনায় এবার অনেক আগেই মুকুল এসেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাধারণত ধরা হয় দীর্ঘ স্থায়ীভাবে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকলে আমের মুকুল ধরতে চায় না। তবে এবার জানুয়ারি মাসে দুই-এক দিন করে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দীর্ঘস্থায়ী শৈত্যপ্রবাহ ছিল না। গড় তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রির কাছাকাছি ছিল। এই তাপমাত্রা আমের জন্য অনুকূল। তবে বর্তমানে তাপমাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। এজন্য আমরা আম চাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। এবার আমের বাম্পার ফলনের আশা কৃষি বিভাগের।