বাসস
  ০৬ মার্চ ২০২৫, ১৮:২৫

চট্টগ্রামের সাবেক কাউন্সিলর জসিম গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পাহাড়খেকো সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিম। ছবি: বাসস

চট্টগ্রাম, ৬ মার্চ, ২০২৫ (বাসস): অবশেষে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) পাহাড়খেকো সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল আলম জসিমকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করে নগরীর আকবর শাহ থানার ওসি বাবুল আজাদ বলেন, বুধবার মধ্যরাতের দিকে ঢাকার রামপুরা থানার বনশ্রী এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার জসিমকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে।

জহুরুল আলম জসিম চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। এছাড়া তিনি উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদে রয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীতে ‘ভূমিদস্যু’ এবং ‘পাহাড়খেকো’ হিসেবে সাবেক কাউন্সিলর জসিম বেশ পরিচিত। তিনি সরকারি খাস জায়গা ও রেলওয়ের জায়গা দখল থেকে শুরু করে পাহাড় কেটে গড়ে তুলেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। নিজস্ব বাহিনী দিয়ে পাহাড় কেটে বানিয়েছেন আবাসিক প্লট। করেছেন বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ।

বেলার প্রধান নির্বাহী বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে বেলার একটি প্রতিনিধিদল ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানা এলাকায় পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শনে গেলে কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম ও তার সহযোগীদের মারমুখী আচরণের শিকার হন। প্রতিনিধিদলকে বাধা দেয়, গাড়ি আটকে রাখে, গাড়িতে ঢিল ছোড়ে ও বিভিন্নভাবে প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। আটকে রাখা সেই গাড়ি পুলিশ গিয়ে ছাড়িয়ে নেয়। এ ঘটনায় তখন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কাউন্সিলর জসিমসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় জসিমকে ১ নম্বর আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

বিতর্কিত এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে নগরীর বিভিন্ন থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা, গুলি ও অর্থ দিয়ে সহায়তাসহ বেশি কিছু অভিযোগে ডজনখানেক মামলা রয়েছে।

এরআগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর জসিমকে গ্রেপ্তারে আকবর শাহ এলাকার একটি ভবনে রাতভর তল্লাশি চালায় পুলিশ। তবে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মধ্যরাত ১২টার দিকে একে খান এলাকার বাসা  থেকে আকবরশাহ থানা পুলিশের একটি দল জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।

পরে তাকে ডবলমুরিং থানা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরদিন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।

জানা গেছে, চসিকের ২০১৫ সালের নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসাবে জয়লাভ করেন জহুরুল আলম জসিম। পাহাড়ে জনবসতি নিরুৎসাহিত করতে অবৈধ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বারবার তাগিদ দিচ্ছে জেলা প্রশাসন গঠিত পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি। তা না করে উল্টো অবৈধ বসবাসকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধায় কাজ করে যাচ্ছিল জসিম। পাহাড়ি এলাকায় প্লট বিক্রি করতে পাকা সড়ক নির্মাণ করে দিয়েছেন তিনি। পাহাড় কাটার মামলা এবং নানা বিতর্কের কারণে ২০২১ সালের নির্বাচনে তাকে দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়তলী থানার বেলতলী ঘোনায় প্রায় দেড় হাজার পরিবারের বসবাস। পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির মতে, এর মধ্যে ৩০০ পরিবার ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে। এসব বাসিন্দাদের অধিকাংশই হাত বদলের মাধ্যমে স্থানীয় কাউন্সিলর জসিমের মাধ্যমে জমি কিনে সেখানে বসবাস করছেন। তার নিয়ন্ত্রণেই আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় কাটা চলে। এজন্য এলাকাভিত্তিক বাহিনীও রয়েছে কাউন্সিলর জসিমের। তারা মূলত জসিমের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি খাস ও রেলওয়ে পাহাড় দখল করে বিক্রি করে থাকেন। পাহাড়ে জায়গা দখল নিয়ে হতাহতের ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। তবে জসিমের ইশারায় ভুক্তভোগীরাই উল্টো মামলার আসামি হয়েছেন।

২০১৫ সালের ২৮ মে পাহাড় কাটার অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ ছাড়া পাহাড় কাটার দায়ে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলর জসিমের স্ত্রী তাছলিমা বেগমকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে অধিদপ্তর। ২০২০ সালের ১০ আগস্ট আকবরশাহ থানার লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড় কেটে স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগে কাউন্সিলর জসিমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল পরিবেশ অধিদপ্তর।